Daily Bangladesh Mirror

ঢাকা, রবিবার, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২

শিক্ষা

কুবিসাসের বিশেষ সাময়িকী ‘রক্তিম জুলাই’র মোড়ক উন্মোচন

কুবি প্রতিনিধি:
২৯ দিন আগে রবিবার, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫
# ফাইল ফটো



কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (কুবিসাস) আয়োজিত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ বিষয়ক বিশেষ সাময়িকী ‘রক্তিম জুলাই’ এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে এ মোড়ক উন্মোচন করা হয়।


কুবিসাসের দপ্তর সম্পাদক চৌধুরী মাসাবিহ’র সঞ্চালনায় ও কুবিসাসের সভাপতি সাঈদ হাসানের সভাপতিত্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন দৈনিক ইত্তেফাকের

কুবি প্রতিনিধি মানসুর আলম অন্তর। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হায়দার আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সোলায়মান। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)-এর মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। এছাড়াও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।


আহত সাংবাদিক মো. শাহিন আলম বলেন, “প্রথমে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি যারা জুলাই বিপ্লবে আহত হয়েছেন এবং পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, বিশেষ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আব্দুল কাইয়ুমকে। আমি আজ এখানে দাঁড়িয়ে আছি একজন পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে নয়, বরং জুলাই অভ্যুত্থানের একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে। ১১ জুলাই আমরা দেখেছি পুলিশ বাহিনী কিভাবে শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের উপর হামলা করেছে। শুধু ১১ জুলাই নয়, ১৮ জুলাইও আমাদের উপর হামলা করা হয়েছিল। যখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের আহত অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন পুলিশ বাহিনী অ্যাম্বুলেন্সও থামিয়ে দেয়। আমরা প্রতিবাদ করলে আমাদের উপরও হামলা চালানো হয়। মিডিয়াকর্মীদের উপর হামলা করেও ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের থামাতে পারেনি। আমরা সবসময় সত্যের পক্ষে ছিলাম। নতুন স্বাধীনতার এক বছর হয়ে গেছে, এখনো সাংবাদিকরা নিরাপদে সংবাদ সংগ্রহ করতে পারেন না। সাংবাদিকতা শুধু একটি পেশা নয়, এখানে রয়েছে অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর এক বিশাল কণ্ঠস্বর।”


প্রধান আলোচক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, “বাংলাদেশের সকল ছাত্রজনতা ও সাংবাদিকরা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। জুলাইয়ে সংবাদ সংগ্রহে রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বাহিনীর কাছে বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন সাংবাদিকরা। মনে রাখবেন, এই আন্দোলনে শহীদদের শেষ নিশ্বাস ত্যাগের ফসল আমরা স্বাধীন হয়েছি। শহীদদের শেষ নিশ্বাসে আমরা বেঁচে আছি, সেই নিশ্বাস আজও এই বাতাসে মিশে আছে, যা আমরা গ্রহণ করি।”


তিনি আরও বলেন, “পৃথিবী ঘুরতে এক বছর সময় লাগে, তেমনি জুলাইও এক বছর পর আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে। জুলাইয়ে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে, তারা বয়সে ছোট এবং তাদের সংগঠনও ছোট ছিল। কিন্তু ছোট সংগঠন নিয়েই তারা নেতৃত্ব দিয়েছে। জুলাইয়ের পর অর্থের অভাবে সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তুলতে না পারায় তারা হেরে যাচ্ছে, জুলাইও হেরে যাচ্ছে।”


প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক ড. হায়দার আলী বলেন, “জুলাই আন্দোলনে ছাত্ররা যেভাবে নিজেদের নেতৃত্বে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছে, আশা করি কুবিসাসও সব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করবে। সাংবাদিকদের কার্যক্রম এমন হওয়া উচিত, যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করে। আপনারাই হচ্ছেন সেই শক্তি, যারা সমাজের শিক্ষিত অংশ হিসেবে সত্য তুলে ধরবেন। মনে রাখবেন, ‘জুলাই ২৪’ হঠাৎ করেই আসেনি এ দেশের মানুষ প্রমাণ করেছে, যদি দাবি ন্যায্য ও যৌক্তিক হয়, তাহলে পুরো জাতি তার পাশে দাঁড়ায়।”


বিশেষ অতিথি ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সোলায়মান বলেন, “জুলাই আন্দোলনে মূল স্রোতের সাংবাদিকরা যে ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছিল, ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা সেখানে ভূমিকা রেখেছে। গত ষোলো বছরের ফ্যাসিবাদের কারণে ক্যাম্পাসগুলো একটি দলের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছিল। সাধারণ ছাত্ররা তাদের মনের কথা বলা, সাংস্কৃতিক চর্চা করা এবং কো-কারিকুলার কার্যক্রম করতে ব্যর্থ হয়েছিল। সেই আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলোকে সামনে নিয়ে এসেছে ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা।”


সভাপতির বক্তব্যে কুবিসাস সভাপতি সাঈদ হাসান বলেন, “কুমিল্লার আন্দোলনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি অন্যান্য স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের অবদান অসামান্য। আন্দোলনের খবর দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে কুবিসাসের সদস্যরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা আন্দোলনের ছবি, ভিডিও ফুটেজ ও লাইভ সম্প্রচার করেছে।” তিনি আরও আহত শিক্ষার্থী, শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন আন্দোলন এবং নারী শিক্ষার্থীদের অবদান তুলে ধরেন।


উল্লেখ্য, সাময়িকীটি ২০২৪ সালের জুলাইয়ে কুমিল্লায় ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতার গণজাগরণ, রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও রাজনৈতিক প্রতিরোধের ঘটনাবলিকে আহতদের ও সাংবাদিকদের চোখে তুলে ধরেছে।

২৯ দিন আগে রবিবার, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫

ইউটিউব সাবস্ক্রাইব করুন