Daily Bangladesh Mirror

ঢাকা, রবিবার, জুলাই ২০, ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

শিক্ষা

শিক্ষার্থীদের আপত্তিতেও নতুন কারিকুলাম, নেপথ্যে ছাত্রদল পুনর্বাসন

কুবি প্রতিনিধি:
২ দিন আগে রবিবার, জুলাই ২০, ২০২৫
# ফাইল ফটো



কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের আপত্তি সত্ত্বেও নতুন কারিকুলাম ওবিই (আউটকাম বেইজড এডুকেশন) চালু করা হয়েছে। ছাত্রদলের দুই নেতাকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে বিভাগের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে।


শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বারবার আপত্তি জানানোর পরও বিভাগীয়

প্রধান নিজ উদ্যোগে নতুন কারিকুলাম চালু করেন। শিক্ষার্থীরা মাস্টার্সে না পড়ার সিদ্ধান্ত জানালে তিনি নাকি মন্তব্য করেন, ‘কাউকে জোর করে পড়াতে চাই না।’


বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের সাবেক দুই শিক্ষার্থীকে ভর্তি করাতে ওবিই কারিকুলাম চালুর অনুমতি প্রশাসনের কাছ থেকে নিয়েছেন বিভাগীয় প্রধান।


তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল বাশার এবং সাফায়েত সজলকে ভর্তি করাতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত ১৬ জুলাই তাদের মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করে নৃবিজ্ঞান বিভাগ। জানা গেছে, সাফায়েত সজল কুবির বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী।


গত ৩ জুলাই নৃবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তরে ভর্তি সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তবে বিজ্ঞপ্তিতে কতজন শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হবে, শিক্ষার্থীর বয়সসীমা, স্টাডি গ্যাপ ইত্যাদি বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এতে করে বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানান।


বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, করোনাজনিত কারণে আমরা দেড় বছর সেশনজটে পড়েছি। তাই ওবিই কারিকুলাম চালু না করার অনুরোধ জানিয়ে একাধিকবার বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করি। তখন বিভাগ জানায়, প্রশাসনের চাপেই ওবিই চালু করা হচ্ছে। কিন্তু পরে জানতে পারি, বিভাগীয় প্রধান নিজেই প্রশাসনের কাছ থেকে চেয়ে এনেছেন ওবিই। আমরা তখন জানিয়ে দিই, আমরা মাস্টার্স করবো না। তখন তিনি বলেন, ‘কাউকে জোর করে পড়াতে চাই না’। পরে এক বছরের মধ্যে মাস্টার্স সম্পন্ন করার শর্তে ওবিই কার্যক্রম চালু হয়। তবে পরে জানা যায়, ছাত্রদলের দুই নেতাকে ভর্তি করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।


তারা আরও বলেন, যারা ভর্তি হয়েছে, তারা একাডেমিক জ্ঞান অর্জন কিংবা পাশ করার জন্য ভর্তি হয়নি। তারা ছাত্রত্ব ধরে রাখার মাধ্যমে রাজনীতি করতে চায়, যা বিভাগের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কারণ হবে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা ছাড়া নামমাত্র ভাইভা নিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রাজনৈতিক স্বার্থে বিভাগকে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে বিভাগের পরিবেশ ও শিক্ষার মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। অন্য বিভাগগুলোতে ওবিই চালু থাকলেও এভাবে রাজনৈতিক সুবিধাভোগীদের ভর্তি করা হয়নি।


গত ১৭ জুন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপকালে বিভাগীয় প্রধান জানান, তিনজন ভাইভায় অংশ নিয়েছেন—আবুল বাশার, সাফায়েত সজল এবং বোরহানউদ্দিন কলেজের এক শিক্ষার্থী। তিনি সাফায়েতকে প্রশ্ন করেন, গবেষণা করতে পারবেন কি না, জবাবে তিনি জানান, গবেষণা এবং পাশ—উভয়ই সম্ভব।


চেয়ারম্যান বলেন, "তারা ফেল করলেও তাতে বিভাগের কোনো ক্ষতি নেই। এটা বিভাগের জন্য একটি নতুন মাইলফলক।"


শিক্ষার্থীদের মতে, এভাবে চললে নৃবিজ্ঞান বিভাগ ‘আদুভাই ও ছাত্ররাজনীতিকদের আশ্রয়স্থল’ হয়ে উঠবে।


এ বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন বলেন, "আমি এসব নিয়ে ফোনে কিছু বলতে পারবো না। এই নিউজ কে করাচ্ছে আমি জানি। আপনি রবিবার আসেন, সরাসরি কথা বলবো।"


পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের প্রধান নুরুল করিম চৌধুরী বলেন, "ভর্তির পদ্ধতি বিভাগ নির্ধারণ করে। তারা চাইলে লিখিত বা ভাইভা নিতে পারে। আমরা শুধু কমিটি করে দিয়েছি, কীভাবে নিয়েছে, সেটা তারা বলতে পারবে।"


এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হায়দার আলী বলেন, "এটা উদ্বেগজনক বিষয়। একটি ছেলে অনেক কষ্ট করে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, সেখানে শুধু কথার মাধ্যমে কাউকে ভর্তি করানো গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এ বিষয়ে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করবো।"

২ দিন আগে রবিবার, জুলাই ২০, ২০২৫

ইউটিউব সাবস্ক্রাইব করুন