কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ছাত্রীকে প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অভিযুক্ত শিক্ষক কাজী এম আনিছুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
গতকাল (১৫ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় তিনি তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষাৎকার দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা। প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ মিনিট ধরে তাঁর
সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। পরে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসানের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।গত ১১ মার্চ একটি মেইল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর কাছে কাজী আনিছের বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ আনা হয়। মেইলে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত শিক্ষকের সঙ্গে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ওই বিভাগের এক ছাত্রীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকার কারণে তিনি উত্তরসহ প্রশ্নফাঁস করে আসছেন। পরে ১২ মার্চ অভিযুক্ত শিক্ষকের কোর্সের পরীক্ষার সময় ও প্রশ্ন পরিবর্তন করা হয়।
ঘটনার পর প্রশাসন কাজী আনিছকে ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরে ২৭ এপ্রিল আরও একটি উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি তদন্তের স্বার্থে ওই বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার নেয়। গতকাল বুধবার অভিযুক্ত শিক্ষক কাজী আনিছও সাক্ষাৎকার দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, তিনি দুপুর ২টা ২০ মিনিটে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। পরে ২টা ৫০ মিনিটে সাক্ষাৎকার দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও উচ্চতর তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মানের কক্ষে প্রবেশ করেন। এ সময় ওই কক্ষে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. তোফায়েল আহামেদ এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. দলিলুর রহমান। প্রায় ৫০ মিনিট তাঁর কাছ থেকে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
পরে তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষাৎকার দেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমাকে তদন্ত কমিটি ডেকেছিল, আমি গিয়েছি। যা প্রশ্ন করেছে, তার উত্তর দিয়েছি।” কী প্রশ্ন করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি তদন্তের স্বার্থে তা জানাতে অসম্মতি জানান।
অভিযুক্ত শিক্ষক কাজী আনিছের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি “তদন্ত কমিটির কাছ থেকে জানুন“ বলে কোনো মন্তব্য করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।
উচ্চতর তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. মোহাম্মদ সোলায়মানের কাছে অভিযুক্ত শিক্ষকের সাক্ষাৎকারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনিও তদন্তাধীন বিষয়ে কিছু বলতে অসম্মতি জানান।
এছাড়াও কাজী এম আনিছুল ইসলামের নামে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে গিয়ে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি সহকর্মীকে “কুত্তা” বলে গালাগাল করেন তিনি। এছাড়া নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আইনুল হকের সঙ্গে অশিক্ষকসুলভ আচরণের অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
পরীক্ষায়ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে কাজী আনিছের বিরুদ্ধে। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও তিনি ইনকোর্স পরীক্ষার ফলাফল পরীক্ষানিয়ন্ত্রকের দপ্তরে জমা দেননি, যার ফলে চূড়ান্ত ফল প্রস্তুতে জটিলতা দেখা দেয়। কাজী আনিছের এমন কর্মকাণ্ড কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি লঙ্ঘন হয়েছে।
এছাড়াও সহকারী প্রক্টর থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে একাধিকবার গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে।
৫ দিন আগে বুধবার, অক্টোবর ২২, ২০২৫