ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দিবস-২০২৫ উপলক্ষ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) দিনব্যাপী নানা আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি’। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে আলোচনা সভা, সেমিনার, মিলাদ মাহফিল, র্যালি, চিত্র ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলাইমান, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হাকিম এবং রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী।বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, “৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে আমরা লক্ষ্য করেছি মানুষ সকাল-বিকেল নিজের মূল্যবান মতামত প্রকাশ করতে পারছে। বলতে পারছে যে আগামী দিনের এই কাজে আমি থাকবো কি থাকবো না। কিন্তু ৫ আগস্টের আগে এমন মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে শতবার টাইপ করে আবার ডিলিট করতে হয়েছে, নিজের মত প্রকাশ করতে পারেনি। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে নিজের মতামত ও অবস্থান জানানোর জন্য, নতুন করে স্বপ্ন দেখা এবং তা বাস্তবায়নের যে প্ল্যাটফর্মগুলো দাঁড়িয়েছে—এগুলোকে ধারণ করতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো শোধরাতে হবে। একতা, সততা এবং নিয়মানুবর্তিতার মাধ্যমে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে হবে।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “৫ আগস্ট একটি স্মরণীয় দিন। এ ধরনের একটি দিন আসতে শত বছর অপেক্ষা করতে হয়। শত বছর লাগে এমন এক সন্ধিক্ষণে পৌঁছতে। সবাই এক কাতারে এসে দাঁড়িয়েছিল। এই শক্তি গত বছর বাধ্য করেছিল চরম এক স্বৈরশাসককে দেশ ছেড়ে পালাতে। দুঃখজনক হলেও সত্য, মাথাটা পালিয়ে গেছে, বডিটা এখনো আছে। এই বডির জ্বালাতন, যন্ত্রণা প্রতি পদে পদে আমাদের ভোগ করতে হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি একটুও কমেনি। যারা যে টেবিলে বসা ছিল তারা সেই টেবিলেই আছে।”
তিনি আরও বলেন, “কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে গোপনে দুর্নীতি চলছে—আমরা তা বুঝতে পারছি, কিন্তু ধরতে পারছি না। আমি সকলের সহযোগিতায় চেষ্টা করবো—সারাদেশে না পারলেও যতদিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছি, ততদিন এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করবো ইনশাআল্লাহ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উদ্দেশে আমি বলবো, শিক্ষকরা চাইলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচার বদলে দিতে পারেন এবং সেটিকে একটি মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে পারেন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় অচিরেই অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাবে। বর্তমানে এটি দ্বিতীয় গ্রেডে অবস্থান করছে, কিন্তু খুব শিগগিরই আমরা প্রথম গ্রেডে উন্নীত হবো। এই লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।”
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন, “জুলাই আন্দোলন শুধু একটি তারিখ নয়, এটি সাম্য, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের প্রতীক। এই আন্দোলন আমাদের শিখিয়েছে—অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোই একজন সচেতন নাগরিকের কর্তব্য। আমরা একটি স্বৈরশাসককে বিদায় করতে পেরেছি, কিন্তু স্বৈরাচারী আচরণ কি দূর করতে পেরেছি? জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম শক্তি ছিল তারুণ্য। সেই তারুণ্যকে ধারণ করতে না পারলে আন্দোলনের প্রকৃত চেতনা ধরে রাখা সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীরা যেন নৈতিকতা, মানবিকতা ও সাম্যের মূল্যবোধে গড়ে ওঠে, এটাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।”
এছাড়াও, অনুষ্ঠানে জুলাইয়ে আহত শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্রেস্ট বিতরণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
২ দিন আগে রবিবার, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫