Daily Bangladesh Mirror

ঢাকা, রবিবার, জুলাই ২০, ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

শিক্ষা

প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষকদের বাস ব্যবহার করেছেন শিক্ষককে হুমকি দেওয়া কামরুল

কুবি প্রতিনিধি:
৪ দিন আগে রবিবার, জুলাই ২০, ২০২৫
# ফাইল ফটো





কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী মো. কামরুল হাসান প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষকদের জন্য নির্ধারিত বাসে উঠে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন।  এ নিয়ে শিক্ষক মহলে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়। শিক্ষকরা বিষয়টিকে ‘বিব্রতকর’ বলে মন্তব্য করেছেন। শুধু বাসে ওঠাই নয়, অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে তিনি সহকারী প্রক্টর

ও প্রো-ভিসিকে প্রকাশ্য দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। 


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের যাওয়া-আসার জন্য শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক বাসের ব্যাবস্থা রয়েছে। তবে, গত ১১ জুলাই সাবেক শিক্ষার্থী কামরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তিনি শিক্ষকদের বাসে উঠে পড়েন এবং সিট দখল করে বসে পড়েন। ফলে অন্য শিক্ষকদের দাড়িয়ে আাসতে হয়। 


ঘটনাটি নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মতে, এটি শিক্ষকদের জন্য অপমানজনক ও বিব্রতকর। অভিযোগ রয়েছে, বিএনপিপন্থী কিছু শিক্ষকের সখ্যতা থাকার কারনে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাব খাটাচ্ছেন। 


এ বিষয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফারুক আল নাহিয়ান বলেন‚ ‘শিক্ষকবৃন্দের পরিবহন সেবা এবং ছাত্রছাত্রীদের পরিবহন সেবা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাও না কিংবা রানিং স্টুডেন্ট ও না। তাহলে কিসের ক্ষমতাবলে কোন যৌক্তিকতায় উনি শিক্ষকদের বাস, আসনে বসেন একজন সাবেক শিক্ষার্থী হয়ে? এতোটুকু শিষ্টাচার যেমন কুবি তাকে শিখাতে পারেনি তেমনি তার এই অনধিকার চর্চার বিরুদ্ধে শিক্ষক মহোদয়গন কিংবা প্রশাসনের নির্লিপ্ততা ভয়ংকর অনিয়মের আভাস দিচ্ছে।’



এ বিষয়ে একই বাসে ক্যাম্পাসে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ডিস্টিংগুইশড শিক্ষকদের বাস আছে। সাবেক শিক্ষার্থী যদি শিক্ষকদের বাসে উঠে তাহলে সেটি বিব্রতকরই। ১১ তারিখের অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের বাসে করে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন এক সাবেক শিক্ষার্থী। সে বাসের সামনের দিকে বসে ছিলো। তাকে দেখে আমরা বিব্রতবোধ করি, সেজন্য আমরা পিছনের দিকে গিয়ে বসি।’


বিষয়ে পরিবহন পুলের প্রধান মো. মোশারফ হোসেন ভূইয়া বলেন‚ ‘দেখুন শিক্ষকদের বিষয়ে আমরা আসলে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। শিক্ষকদের বাস শিক্ষকদের ব্যাপার। ড্রাইভার-হেল্পার আছে শিক্ষকরা যদি কাউকে উঠাতে বলে তারা উঠাতে পারে। কিন্তু আমরা তো স্টুডেন্ট-টিচার সবার জন্যই আলাদা-আলাদা বাস বরাদ্দ দিয়েছি।’



খোজ নিয়ে জানা যায়, ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. এম এম শরিফুল করিমের সাথে তার সখ্যতা আছে। এছাড়াও শরিফুল করিমের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরির জন্য বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসে তিনি দৌঁড়ঝাঁপ করেছেন। ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে উপাচার্য হওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় কামরুল হাসান ও শরিফুল করিম একসঙ্গে দৌঁড়ঝাঁপ করেছেন। তবে এখন বিএনপি পন্থী শিক্ষকদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুললেও আগে তিনি আওয়ামীলীগ করতেন এবং আওয়ামী পন্থি শিক্ষকদের সাথে উঠাবসা করতেন। আওয়ামী পন্থি শিক্ষক ও সাবেক প্রক্টর ওমর সিদ্দিকী রানার সাথে থেকে তার বিভিন্ন অন্যায় কাজের সহযোগী ছিলেন। 


এ ঘটনাতেও শরিফুল করিমের ইন্ধন থাকতে পারে বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, সেদিন হাসান কামরুল শিক্ষকদের বাসে শরিফুল করিমের সাথে ক্যাম্পাসে আসেন। 


হাসান কামরুলকে নিয়ে আসার বিষয়টি অস্বীকার করে অধ্যাপক ড. এম এম শরীফুল করিম বলেন‚ ‘১১ তারিখ হাসান কামরুল হয়তো আসতে পারে‚ আমি খেয়াল করিনাই। অনেকেই তো আসছে। আমি কি করে জানবো আমার পাশে ১১ তারিখ কে বসে আসছে! তোমরা যাদের কাছে জেনেছো তার রেফারেন্সেই দিয়ে দিয়ো।’ তার ঠিক পেছনের সিটে হাসান কামরুলের বসার ব্যাপারে জানতে চাইলে এক পর্যায়ে তিনি প্রতিবেদকের সাথে রাগান্বিত হয়ে যান।


এছাড়াও  শিক্ষকদের বাসে করে ক্যাম্পাসে এসে কামরুলের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগর শাখার সদস্য সচিব ও কুবির সাবেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রাশেদুল হাসান বলেন‚ ‘আমরা দেখতে পেয়েছি গত ১১ জুলাই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূইয়া ভাই এসেছিলেন। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে হাসান কামরুল মোতাসিম বিল্লাহ স্যার ও প্রো-ভিসি ম্যামকে নিয়ে যে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছে সেটি দুঃখজন বিষয়। ছাত্র হয়ে শিক্ষককে কোনভাবেই হুমকি-ধামকি দিতে পারে না। তাছাড়া সাংবাদিক প্রতিনিধি হয়ে উপদেষ্টাকে ফুল দিতে যাওয়া বা কাউকে ফোর্স করা কোনটিই তিনি করতে পারেন না এগুলো আমাদের চোখে দৃষ্টিকটু লেগেছে।’


সার্বিক বিষয়ে  প্রক্টর অধ্যাপক ড. আব্দুল হাকিম বলেন‚ ‘আমি ১১ তারিখের বিষয়ে অবগত নই কারণ ১১ তারিখ আমার অনেক ব্যাস্ততা ছিলো। আমি এটা জানি যে এর আগের দিন বৃহস্পতিবার, ১০ তারিখেও হাসান কামরুল বাসে করে গিয়েছিলো। কেউ না উঠালে তো সে উঠে না, হয়তো কোন শিক্ষক তাকে বাসে উঠিয়েছে। আমার বিবৃতি হলো শিক্ষকদের বাসে তাকে উঠানো এটা উচিত হয়নি। সেদিন সে ক্যাম্পাসে যে বিশৃঙ্খলা করে গিয়েছিলো সেটার বিষয়ে ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছি। অনির্দিষ্টকালের জন্য তার ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছি।’

৪ দিন আগে রবিবার, জুলাই ২০, ২০২৫

ইউটিউব সাবস্ক্রাইব করুন