কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (কুকসু) নির্বাচনের দাবিতে গত ২৯ জুলাই একটি পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করলেও এক মাস পার হলেও এ বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, ২৯ জুলাই শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি তিন মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের
মাননীয় উপাচার্যের নিকট সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করবে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. এম. এম. শরীফুল করীমকে।অন্যদিকে, কুকসু নির্বাচনের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ না থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফারুক আল নাহিয়ান বলেন, “ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য সংবিধানে সংশোধন, গঠনতন্ত্র প্রণয়ন এবং নির্দিষ্ট দিবস ঠিক করে রোডম্যাপ প্রকাশ অপরিহার্য। কিন্তু ২৯ জুলাই কমিটি গঠনের পরও এখনো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি ইস্যু হয়নি, যা প্রক্রিয়াকে কচ্ছপগতিতে ঠেলে দিয়েছে। এতে সন্দেহ হয়, শিক্ষার্থী-শিক্ষক উভয় পক্ষই যথেষ্ট সরব নন। তাই দ্রুত চিঠি ইস্যু ও গঠনতন্ত্রের খসড়া প্রণয়ন জরুরি, যাতে রোডম্যাপ ঘোষণা করা সম্ভব হয়।”
ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ইভা বলেন, "প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে তিন মাসের মধ্যে কার্যক্রম শুরু হবে, তবে এটি আমার কাছে কেবল সময়ক্ষেপণের কৌশল মনে হয়। ছাত্র সংসদ কোনো অনুগ্রহ নয়, বরং শিক্ষার্থীদের বৈধ প্রতিনিধিত্বের প্ল্যাটফর্ম। তাই জরুরি ভিত্তিতে সময়সীমা ঘোষণা, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী রূপরেখা প্রকাশ এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে অগ্রগতি জানানো উচিত। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আমাদের কুকসুও দ্রুত কার্যকর হওয়া দরকার।”
লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. হাসান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনীতি মুক্ত ও শিক্ষার উপযোগী পরিবেশ গড়ে তুলতে ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। কিন্তু প্রশাসন আশ্বাস দিলেও শুধু কমিটি গঠন করেই থেমে গেছে। আমরা ২১ কার্যদিবসের মধ্যে অগ্রগতি আশা করেছিলাম, কিন্তু এখনো কোনো ফল পাইনি। তাই দ্রুত রোডম্যাপ প্রকাশ করতে হবে, না হলে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।”
কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এম. এম. শরীফুল করীম জানান, “ইতিমধ্যে আমরা একটি মিটিং করেছি। আইনের মধ্যে কী আছে সে বিষয়গুলো দেখেছি। আমাদের আইনে (কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়) এ ধরনের কোনো কিছু উল্লেখ নেই। যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নির্বাচন হচ্ছে, সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন আমরা দেখছি। আমাদের সমসাময়িক বিশ্ববিদ্যালয় যেমন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়—তাদেরও আইনে নেই। তারা কিভাবে অগ্রসর হচ্ছে, তাদের কাগজপত্রগুলো এনে আগামী সপ্তাহে আমরা আবার বসব।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা আমাদের কর্মপরিকল্পনাটা ঠিক করেছি। যেহেতু আমাদের আইনে নেই, তাহলে কিভাবে এটি আইনের কাঠামোর মধ্যে আনা যায়, সে প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাগজপত্র সংগ্রহ করে সিদ্ধান্ত নেব।”
কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আহসান উল্যাহ, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান খান, একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুতাসিম বিল্লাহ এবং ছাত্র উপদেষ্টা ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল্লাহ আল মাহবুব। তিনি কমিটির সদস্য-সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
৮ দিন আগে শনিবার, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫