কুমিল্লা নগরীতে দত্ত বাড়ীর পূজো মানে ভিন্ন আঙ্গিকে, নতুন কিছুর অবতারণা। প্রতিবছরই নতুন নতুন রূপে এ বাড়িতে পালিত হয় সরস্বতী পূজা। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। উপমহাদেশের সুর সম্রাট শচীন দেব বর্মণের বর্ণাঢ্য সঙ্গীত ক্যারিয়ারের প্রতিচ্ছবিতে রাঙ্গানো হয়েছে এবার পূজো।
নগরীর কান্দিরপাড়ের নজরুল এভিনিউ সড়কের দত্ত বাড়ির পূজোর সাজসজ্জায় ছিল শচীনের সরব উপস্থিতি। পূজার
নামকরণ করা হয়েছে "মায়ের আরাধনায় সুরসম্রাট" । ফলে বাড়িজুড়ে রয়েছে শচীনের নানা চিত্র প্রদর্শনী। পূজোর প্রধান ফটকের দুপাশে শোভা পাচ্ছে শচীন দার বিখ্যাত তবলার ছবি।ভিতরে ছিল শচীন দার বিখ্যাত গানের কলির পোষ্টার, টেপ রেকর্ডার, হারমোনিয়াম, মীনা বর্মণের শেষ ছবির বৃত্তান্ত খচিত পোষ্টার। যা দেখতে ভিড় করেছেন কুমিল্লা নগরী ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত হিন্দু -বৌদ্ধ ও মুসলিম দর্শনার্থীরা, যা সবার নজর কেড়েছে।সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারী) নগরীর কান্দিরপাড়ে দত্ত বাড়ির পূজার ১৮ বছরে পদার্পনে শচীন কর্তার ৫০তম মহাপ্রয়াণ বছর উপলক্ষে "মায়ের আরাধনায় সুরসম্রাট" নামে এই আয়োজন করা হয়। বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মাঘ মাসের শুক্লাপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে বিদ্যা ও জ্ঞানের দেবী সরস্বতী পূজা করেন।
ধর্মীয় রীতি মেনে সারাদেশের ন্যায় কুমিল্লা ও বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্যের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা। ব্যক্তিগত পর্যায়, মন্দির-সেবাশ্রম ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ধুমধামে পূজার আয়োজনে ভক্ত-পুণ্যার্থীর ঢল নেমেছে। মন্দিরে মন্দিরে অঞ্জলী ও প্রসাদ বিতরণ ছাড়াও বিদ্যা ও জ্ঞানের জন্য দেবীর প্রার্থনায় মিলিত হন পুণ্যার্থীরা। সকালে থেকেই তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সের ও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার ভক্ত ও পুণ্যার্থীরা অঞ্জলী নিতে চলে আসেন মণ্ডপে মণ্ডপে। এসময় তারা দেবীর কাছে প্রার্থনায় মিলিত হন।
দত্ত বাড়ি পূজার সাধারণ সম্পাদক ডা. অংকুর দত্ত ও সাংগঠনিক সম্পাদক ডা স্বস্তি সেন গুপ্তা বলেন, প্রতি বছর এ দিনটির জন্য আমরা অপেক্ষা করি, বছর শেষে দিনটি আসায় আমরা খুবই আনন্দিত। পূজার অঞ্জলী নিয়েছি, বিদ্যা ও জ্ঞানের জন্য প্রার্থনা করেছি। তবে এবার চেষ্টা করছি একটু ব্যতিক্রমি কিছু করতে। কুমিল্লা চিরকালই একটা সাহিত্য-সংস্কৃতির শহর ছিল, তাই চেষ্টা করেছি কুমিল্লার কিশোর-কিশোরিরা যেন শচীন দেব বর্মন, ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্র দত্ত,কাজী নজরুল ইসলাম,নবাব ফয়জুন্নেছা সম্পর্কে ধারণা দিতে মিউজিয়ামের মত করে আমরা চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি। হিন্দু -মুসলিম সবাই দেখতে আসছে এতেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক। সামনে এমন চিন্তা ভাবনা আমাদের অব্যাহত থাকবে। কুমিল্লাকে যেন সারা বিশ্বের মানুষের কাছে রিপ্রেজেন্ট করতে পারি সেজন্য সকলের আশির্বাদ কাম্য।
এদিকে পূজা মণ্ডপে অতিথি হিসেবে চিত্রায়ন প্রদর্শনী দেখতে উপস্থিত ছিলেন নজরুল গবেষক ড. আলী হোসেন চৌধুরী, নাট্যগুরু শাহজাহান চৌধুরী, অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান, কল্লোল মজুমদার, অভিজিৎ সিনহা মিঠু,কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষক সমীর মজুমদার, প্রকৌশলী আব্দুল মালেক।
জানা গেছে, এ বছর জেলার শতাধিক মন্দির ও ১ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে সরস্বতী পূজা উদযাপিত হয়েছে। পূজাকে ঘিরে রয়েছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন।
১৪ দিন আগে রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫