Daily Bangladesh Mirror

ঢাকা, শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

লিড নিউজ

যুক্তরাজ্যের নির্বাচন: যে কারণে ভরাডুবি কনজারভেটিভ পার্টির

ডেস্ক রিপোর্ট:
১৮ দিন আগে শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫
# ফাইল ফটো

যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে লেবার পার্টি। আর এর মধ্যদিয়ে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির দীর্ঘ ১৪ বছরের শাসনামলের অবসান ঘটেছে। নির্বাচনের সবশেষ পাওয়া ফলাফলে ৪শ'র বেশি আসনে জয়লাভ করেছে লেবার পার্টি। অন্যদিকে, কনজারভেটিভরা পেয়েছে ১২০ টির মতো আসন।

নির্বাচনে জয় পেয়েছেন  টিউলিপ সিদ্দিক, রুশনারা আলিসহ লেবার পার্টি মনোনীত বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত

প্রার্থী। ধারণা করা হচ্ছে লেবার পার্টির মন্ত্রিসভায়ও স্থান পেতে পারেন এদের যেকেউ।  

তবে, ঠিক কী কারণে এবারের নির্বাচনে কনজারভেটিভদের এমন ভরাডুবি, তা নিয়ে এরইমধ্যে চুলচেলা বিশ্লেষণে ব্যস্ত ব্রিটিশ গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। দেখে নেয়া যাক বিতর্কিত কোন বিষয়গুলোর জন্য এবারের নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে ঋষি সুনাকের দলের।

ভঙ্গুর অর্থনীতি:
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতায় দেশটির জনগণকে আরো দারিদ্রতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদগণ। ২ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি ২০২২ সালের অক্টোবরে গিয়ে দাঁড়ায় ১১.১ শতাংশ। আর এরপর থেকেই সরকারের অর্থনৈতিক নীতিমালার বিষয়ে প্রশ্ন তোলে দেশের জনগণ।

অভিবাসন:
সম্প্রতি বছরগুলোতে দেখা গেছে যুক্তরাজ্যে নৌকাযোগে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে অনেক মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরাপদ জীবনের লক্ষ্যে বৃটেনে আসে বসবাসের আশায়। কিন্তু সেক্ষেত্রে রুয়ান্ডাতে অভিবাসী প্রত্যাশীদের পাঠিয়ে দিতে সুনাক সরকারের সিদ্ধান্ত সমালোচনার জন্ম দেয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবিষয়ে সমালোচনা করে এমন পরিকল্পনাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন, অমানবিক বলে অভিহিত করেন। কারন যুদ্ধ, অস্থিরতা আর দূর্ভিক্ষের জন্য পালিয়ে বাঁচা ছাড়া সাধারন মানুষের বিকল্প পথ থাকে না।

ইংলিশ চ্যানেলে অন্তত ২৭ জনের মৃত্যুর ঘটনা যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের অস্থিরতা আরো বাড়িয়ে তুলেছিল। এমনকি কীভাবে ছোট ছোট এসব নৌকাযোগে অভিবাসী প্রত্যাশীদের ঠেকানো যায় তা নিয়ে  ম্যাক্রোঁ ও বরিস জনসন বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। আর তা ঠেকাতে এই নৌরুটে স্মাগলিং বাড়তে পারে এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার করেন উভয়েই। চলতি বছরে ২৩ হাজার অভিবাসী প্রত্যাশী এসব ছোট নৌকাযোগে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছিলেন আর যা গত বছরের তুলনায় সাড়ে ৮ হাজার বেশি বলে জানান হয়।

ট্যাক্স:
বরিস জনসনের পর লিজ ট্রাস দায়িত্ব পাবার পর বিতর্কিত ট্যাক্স কাটিং ইস্যু নিয়ে ‘মিনি বাজেট’ প্রণয়নের ফলে মাত্র ৪৯ দিন ক্ষমতায় থেকে তাকে বিদায় নিতে হয়। তার প্রণীত বাজেটের ফলে জনস্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হুমকির মুখে পড়ে।

ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার:
ডেন্টাল চিকিৎসা থেকে শুরু করে ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগের বিনামূল্যে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার অঙ্গীকারের বিষয়টিকে খুব একটা সফলভাবে সুনাক সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি বলেও দাবি বিশেষজ্ঞদের। এমনকি এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস বা হাসপাতালে একটি বেড পেতে বয়োবৃদ্ধদেরকেও অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে ঘন্টার পর ঘন্টা। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস বা এনএইচএস প্রধান ইলি অরটন অবশ্য সুনাকের এই প্রকল্পকে স্বাগত জানিয়ে সরকার আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে বলে বিবৃতি দিয়েছিলেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যর্থতা
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সুনাক সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তেমন সফলতা নেই বলে দাবি পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের। পরিবেশবাদীরা জলবায়ু ইস্যুতে সুনাক সরকারের ধীরগতি বাস্তবায়নে প্রক্রিয়া নিয়েও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। যদিও এবিষয়ে চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার বিবিসিকে আগামি ২০৩০ সালের মধ্যে গ্যাসোলিনের ব্যবহার বন্ধ ও ডিজেল চালিত যানবাহন পুরোপুরি নিষিদ্ধের কথা জানান ঋষি সুনাক। কিন্তু বিশদ কোনো পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেননি তিনি। যদিও ২০৫০ সালে আরো সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনের বিষয়ে তার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এর আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ‘নেট জিরো’ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

বরিস জনসনের পার্টিগেট কেলেঙ্কারি:
সোমবার বৃটেনের হাউজ অব কমন্সে কোভিড চলাকালীন সময়ে সাবেক প্রধানমনন্ত্রী বরিস জনসনের অফিসে পার্টি অনুষ্ঠানের বিষয়টি নিয়ে জনসম্মুখে আবারো সমালোচনা করে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়, জনসনের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন ভুমিকার জন্য পার্লামেন্টে আইন প্রণেতারা তার বিরুদ্ধে ৩৫৪ ভোট  দিয়ে অনাস্থা এনেছিলেন। এর ফলে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আইন মানতে বাধ্য ও সত্য প্রকাশের সাহস থাকা উচিত বলে রিপোর্টে মন্তব্য করা হয়। এ প্রসঙ্গে লেবার পার্টির সাবেক এক এমপি পার্টিগেট বিষয়ে ভোটারদের মধ্যে চরম ক্ষোভ কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন।

ব্রেক্সিট ইস্যু  :
২০১৬ সালের গণভোটে ব্রেক্সিটের পক্ষে ব্রিটিশরা ভোট দিলেও এখন পর্যন্ত ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ সুনাক সরকার। কারণ হিসাবে বলা হয়, ইউরোপ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কার্যকর চুক্তি পাস না হওয়ায় বারবার আটকে যায় প্রক্রিয়াটি। ব্রেক্সিট চুক্তি পাস না হওয়ার বড় কারণ পার্লামেন্টে কনজারভেটিভ পার্টির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা। থেরেসা মে কিংবা বরিস জনসন, যতবারই প্রস্তাব তুলেছেন ততবারই প্রয়োজনীয় সংখ্যক এমপিদের সমর্থন না থাকায় তা আটকে যায় ১ কোটি ৭৪ লাখ মানুষের গণভোটের রায়। ব্রেক্সিটের বিরোধিতা করেছিলেন গণভোট আয়োজনের সময় ক্ষমতায় থাকা কনজারভেটিভ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। ব্রিটিশ জনগণ ইউরোপ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার রায় দিলে তিনি পদত্যাগ করেন। অন্তর্র্বতীকালীন দায়িত্ব নিয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের আশায় আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন ক্যামেরনের স্থলাভিষিক্ত হওয়া থেরেসা মে।

তবে ২০১৭ সালের নির্বাচনে কনজারভেটিভরা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন না করায় থেরেসার নেতৃত্বে জোট সরকার ক্ষমতায় আসে। চুক্তির শর্ত নিয়ে জোট ও বিরোধীদের মত-ভিন্নতার কারণে বিলম্বিত হয় ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন। পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তি পাস করাতে ব্যর্থ ও দলের নেতাদের আস্থা হারানোর পর পদত্যাগ করেন থেরেসা মে। কনজারভেটিভরা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেয় জনসনকে। তিনিও দায়িত্ব নিয়ে থেরেসা মতোই পার্লামেন্টে নিজের চুক্তি পাস করাতে ব্যর্থ হন তিনি। একই ধারাবাহিকতায় সুনাক আমলেও আসেনি ব্রেক্সিট ইস্যুতে বড় কোন চমক।

সব মিলিয়ে গেল কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ইস্যুতে সিরিজ ব্যর্থতার কারণেই কনজারভেটিভদের ১৪ বছরের শাসনামলের পতন ঘটেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সেইসঙ্গে, ব্রিটেনজুড়ে পরিবর্তনের যে ডাক দিয়েছিলেন লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার, সেইডাকে সাড়া দিয়েই ব্রিটেনবাসী দেশজুড়ে একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিয়েছেন বলেও মত তাদের।

১৮ দিন আগে শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫

ইউটিউব সাবস্ক্রাইব করুন