কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) আরেকটি খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যাকান্ড দেখতে চায় না বলে মন্তব্য করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। সকল ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ক্যাম্পাসে আলোচনা সভা ও পোস্টারিং কার্যক্রমের প্রতিবাদের আয়োজিত মানববন্ধনে এ মন্তব্য করেন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফারুক নাহিয়ান ।
রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় মানববন্ধন শেষে
প্রক্টর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে শিক্ষার্থীরা।মানববন্ধনে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফারুখ নাহিন বলেন, ছাত্রলীগের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি ও আন্তকোন্দোলে তৎকালীন বঙ্গবন্ধু হলে খালেদ সাইফুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার মা এখনো সেই বিচারের আশায় ঘুরছেন। বর্তমানে আাবরা রাজনৈতিক দল এমন লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি চালু করতে চায়। রাজনীতি চালু হলে ভবিষ্যতে যে এমন ঘটনা ঘটবে না এমন নিশ্চয়তা নেই। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আরেকটি খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যাকান্ড দেখতে চায় না।
আইন বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বায়জিদ হোসেন বলেন, 'আমরা ভুলে যাইনি ২০১৬ সালে ছাত্রলীগের গুলিতে হত্যা হওয়া খালেদ সাইফুল্লাহ ভাইয়ের কথা। আমরা ভুলে যাইনি গনিত বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম ভুট্টু ভাইয়ের কথা যাকে শহীদ ধীরেনদ্রনাথ দত্ত হলের পাহাড় থেকে বস্তা বেধে নিছে ফেলে দেওয়ার মতো ঘটনা। আমরা ভুলে যায়নি গনরুমে ঘন্টার পর ঘন্টা রাতের পর রাত শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের কথা। আমরা এই ক্যাম্পাস স্বাধীন এবং সুশৃঙ্খল একটি শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে চাই। আমরা আর একটাও খালেদ সাইফুল্লার মতো লাশ দেখতে চাইনা। যারা আবারো সেই কালচারে ফিরে যেতে চায় তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের নিকট আহ্বান করছি।'
আইসিটি বিভাগের শিক্ষার্থী সায়েম মোহাইমিন বলেন, ‘বাংলাদেশে রাজনীতি থাকবে, কিন্তু কুবির ৫০ একরের ভেতরে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম আমরা চাই না। অতীতে রাজনীতির কারণে এক শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছেন, অনেককে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। আমরা চাই কুবি রাজনৈতিক আধিপত্য থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকুক।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও একশতম সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুনরায় প্রজ্ঞাপন জারি করে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।
তবে সম্প্রতি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে ছাত্রদল, ছাত্র শিবির, বাগছাস, ইসলামি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ইত্যাদি ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। সর্বশেষ গত ৭ ও ৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পোস্টারিং ও মুক্ত মঞ্চে আয়োজিত ছাত্রদলের অলোচনা সভাকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হাকিম বলেন, ‘গতকাল যে প্রোগ্রামটি আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছি, সেটির জন্য প্রক্টরিয়াল বডির কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। এতে করে কোনো বিশৃঙ্খলার দায়ভার প্রশাসন নেবে না। আমরা বারবার রিকোয়েস্ট করেছি ১ম ও ১০০তম সিন্ডিকেটে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কুবি হবে রাজনীতি ও ধূমপানমুক্ত ক্যাম্পাস। তবুও কিছু ঘটনা অগোচরে ঘটছে।’
নিয়ম ভঙ্গের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগামী সিন্ডিকেট সভায় এই বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। যারা নিয়ম ভঙ্গ করেছে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গত ১৫ বছর ধরে এ ধরনের কার্যক্রম চলেছে; বিষয়টি সঠিকভাবে সমাধান করতে কিছুটা সময় লাগবে।’
৪ দিন আগে রবিবার, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৫
