Daily Bangladesh Mirror

ঢাকা, বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ২৩, ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২

শিক্ষা

হলে সিনিয়রের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, নিরাপত্তাহীনতায় কুবি শিক্ষার্থী

কুবি প্রতিনিধি:
৫ ঘন্টা আগে বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ২৩, ২০২৫
# ফাইল ফটো



কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের হাতে র‌্যাগিং-সদৃশ দুর্ব্যবহার, হুমকি এবং অপমানের শিকার হয়েছেন ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী দ্বীন ইসলাম হৃদয়।  



এ ঘটনায় ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে তিনি ২৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর

বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থী হলেন বাংলা বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইউনুস আলী এবং রোমান।



অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, প্রায় এক মাস আগে হল প্রশাসনের মাধ্যমে তিনি শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ১০৪ নম্বর (গণরুমে) সিট পান। সেখানে তিনি ছাড়া বাকি সাতজন ছিলেন ১৮তম আবর্তনের শিক্ষার্থী। ফলে জুনিয়রদের সঙ্গে সহাবস্থানে সমস্যা দেখা দিলে তিনি প্রভোস্টকে বিষয়টি অবহিত করেন। প্রভোস্ট বিষয়টি বিবেচনা করে গত ১৯ অক্টোবর (রবিবার) তাকে ১০৩ নম্বর (গণরুম) রুমে স্থানান্তর করেন।



দ্বীন ইসলামের অভিযোগ, ১৯ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে তিনি টিউশন শেষে নতুন রুমে গিয়ে বিষয়টি জানালে রুমের দুই শিক্ষার্থী রোমান (বাংলা-১৮) ও ইউনুস (বাংলা-১৮) তাকে আক্রমণাত্মক কথা বলতে থাকেন। তারা বলেন, “হলে উঠার, হলে থাকার কিছু রুলস আছে। চাইলেই কেউ হলে উঠতে পারে না, হলে থাকতে হলে কষ্ট করতে হয়।” তিনি প্রতিবাদ করলে রোমান উচ্চস্বরে বলেন, “এই আস্তে কথা বলুন, আপনি এখনো হলে থাকেন না।” আর ইউনুস আঙুল তুলে বলেন, “প্রশাসন মুখ্য না, প্রশাসন চাইলেই কাউকে শিফট করতে পারে না।”



এই সময় রুমে উপস্থিত ছিলেন রাসেল (ইংরেজি-১৭), রাতুল (সিএসই-১৭) ও আব্দুল্লাহ (ব্যবস্থাপনা-১৭)। রাসেল প্রতিবাদ জানালে রোমান বলে, “এখন হলে সিনিয়র-জুনিয়র নেই, হলে যে আগে আসে সে-ই সিনিয়র।” দ্বীন ইসলাম জানান, “তারা টেবিলে আঘাত করে তেড়ে আসে। পরিস্থিতি আরও খারাপের আশঙ্কায় আমি রুম থেকে বের হয়ে হলের সহকারী রেজিস্ট্রারকে বিষয়টি জানাই।”



পরদিন (২০ অক্টোবর) সকালে প্রভোস্ট উভয় পক্ষকে ডেকে বক্তব্য নেন। সেখানে রাসেল, রাতুল ও দ্বীন ইসলাম তাদের বক্তব্য দিলে রোমান ও ইউনুস নিজেদের পক্ষে যুক্তি দেখান। ইউনুস বলেন, “স্যার, আমি নরমালভাবেই একটু উচ্চস্বরে কথা বলি।” রোমান বলেন, “স্যার, আমি টেবিলে থাপ্পড় দেইনি, বসা থেকে দাঁড়িয়েছি।” প্রভোস্ট তাদের আচরণ ও পূর্ববর্তী উগ্রতার প্রেক্ষিতে রোমান (বাংলা-১৮), ইউনুস (বাংলা-১৮) এবং নাদিম (বাংলা-১৮)-এর সিট তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করেন। প্রভোস্ট বলেন, “তাদের আগেও সতর্ক করা হয়েছিলো, কিন্তু তারা সংশোধন হয়নি।”



অভিযোগে দ্বীন ইসলাম আরও জানান, ওই ঘটনার পর তাওহীদ (১৭তম আবর্তন) নামের এক শিক্ষার্থী তাদের হয়ে রাজনৈতিক উগ্রতা দেখিয়ে তাকে হুমকি দেন। এ সময় রুমে উপস্থিত ছিলেন হারিস (১৫তম ব্যাচ) ও রাতুল (১৭তম)। প্রভোস্ট কর্তৃক সিট বাতিলের পরও তিনজন শিক্ষার্থীকে ২১ অক্টোবরের মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও তারা এখনও হলে অবস্থান করছেন। 



দ্বীন ইসলাম জানান, “হল প্রশাসন থেকে পরে আমাকে জানানো হয় তারা হলে থাকবে, সমস্যা হলে জানাতে। এই ব্যবহারে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, স্বাভাবিক পড়াশোনা করতে পারছি না।”



অভিযোগপত্রে দ্বীন ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং যারা হুমকিমূলক আচরণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।


অভিযুক্ত রোমান বলে, "ওনাকে স্যার সিট দিয়েছিল, আমি যখন পড়তেছিলাম ওনি (দ্বীন মোহাম্মদ) আসলেন, তিনি বললেন, আমাকে সিট দিয়েছে। আচ্ছা আমরা তো এখানে ৮ জন বিদ্যমান আছি, এখানে যে সিপ্ট করেছে তার কি অভিমত তা তো আমরা জানিনা। আমি শুধু কথা বলার সময় দাড়িয়ে পড়ছিলাম এটা হচ্ছে আমাদের ভুল। 


দ্বীন ইসলাম অভিযোগ করেন শিবির সন্দেহে তার সাথে এমন আচরণ করেছেন। অভিযোগের সত্যতার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত রোমান বলেন, "এটা ওনি (দ্বীন মোহাম্মদ) বানিয়ে নিজে বলেছে। এরকম কিছু হয়নি। প্রভোস্ট স্যার আমাদের সিট ক্যান্সেল (বাতিল) করেছিল। তারপর বিস্তারিত জেনে আমাদেরকে সিট দিয়েছে আবার ২দিন পর হলে আসছি। এখন হঠাৎ করে দেখলাম আজকে ওনি অভিযোগ দিয়েছে।"


তিনি বলেন, "আমার ভুলটা ছিল যে ওনি আসছিল জুনিয়র হিসেবে কেন কথা বললাম। যদি ওইভাবে বলে থাকি স্যার এ বিষয়ে আমাদের শাস্তি দিয়েছিল এবং ক্ষমাও করেছিল।"


আরেক অভিযুক্ত মো. ইউনুস আলীকে একাধিকবার কল দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি। 


এ বিষয়ে জানতে শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক মো. জিয়া উদ্দিন বলেন, "খুব সম্ভবত বিকালের পরে একটা অভিযোগ দিয়েছে, অফিস টাইমের পরে। আমরা দেখে ব্যবস্থা নিবো। আমরা অভিযোগ টা রবিবারে পর্যালোচনা করে অভিযোগ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো।"


এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল হাকিম বলেন, "এখনো আমি অভিযোগ পত্রটি হাতে পাইনি। আমি খোঁজ খবর নিয়েছি। আগামী রবিবার হাতে পেলে বিষয়টি দেখব।"


উল্লেখ্য, এর আগেও মো. ইউনুস আলী, রোমানসহ বাংলা বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে একই বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের র্যাগিং করার অভিযোগ উঠেছিল।

৫ ঘন্টা আগে বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ২৩, ২০২৫

ইউটিউব সাবস্ক্রাইব করুন