জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বিশ্বজুড়ে সাইবার স্ক্যাম ও কেলেঙ্কারির ভয়াবহ বিস্তারের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এই স্ক্যাম শীঘ্রই আফ্রিকা ও ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সোমবার প্রকাশিত জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়ায় কয়েক বিলিয়ন ডলারের সাইবার অপরাধ সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এই চক্রগুলি সুপরিকল্পিতভাবে সাইবার ক্রাইম
পরিচালনা করছে এবং বর্তমানে পুরো এশিয়াজুড়ে সক্রিয়। এখন তারা তাদের কার্যক্রম আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকাতেও বিস্তার করার চেষ্টা চালাচ্ছে।প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই অপরাধ চক্রগুলি সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একাধিক গ্যাং ক্রিপ্টোকারেন্সি জালিয়াতি, রোমান্স স্ক্যাম (ভালোবাসার ফাঁদ) এবং নারীদের ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করছে। অনেক ক্ষেত্রে পাচারকৃত ব্যক্তিদের জোরপূর্বক এই অপরাধমূলক কাজে জড়িত করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের ড্রাগ ও অপরাধ বিষয়ক সংস্থা ইউএনওডিসি-র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিনিধি বেনেডিক্ট হফম্যান জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে-কে জানিয়েছেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এই ধরনের অপরাধ ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ মাঝেমাঝেই অভিযান চালাচ্ছে, কিন্তু এক গ্যাং ধ্বংস হলে অন্যটি গড়ে উঠছে।
বর্তমানে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এই অপরাধ সবচেয়ে বেশি বিস্তৃত। দেশটিতে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধী গোষ্ঠীগুলি। এছাড়াও লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে এই ধরনের সাইবার অপরাধ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
হফম্যানের মতে, শুধুমাত্র ২০২৩ সালে সাইবার অপরাধের কারণে বিশ্বব্যাপী মানুষ প্রায় ৩.৭ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে, যার মধ্যে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই ক্ষতির পরিমাণ ৫৬০ মিলিয়ন ডলার।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান
এই সমস্যা মোকাবিলায় জাতিসংঘ একটি আন্তর্জাতিক সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। সম্প্রতি চীন মিয়ানমারে অভিযান চালিয়ে সাইবার অপরাধী গ্যাংগুলির বেশ কয়েকটি ঘাঁটি ধ্বংস করেছে। সেখান থেকে প্রায় ৭,০০০ কর্মীকে উদ্ধার করা হয়েছে, যারা ৫০টিরও বেশি দেশ থেকে পাচার হয়ে এসে জোরপূর্বক এই অপরাধে জড়িত হয়েছিল।
একইভাবে কম্বোডিয়াতেও সরকার সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালাচ্ছে। তবে এই সমস্যা বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত হওয়ায়, একক কোনো দেশের পক্ষে এটি মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে উঠছে। তাই বৈশ্বিক সহযোগিতা ও কঠোর আইনি ব্যবস্থাই একমাত্র出路 বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
৬ দিন আগে সোমবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৫