নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের শিক্ষার্থী ও বহিরাগত দ্বারা অতর্কিত হামলার শিকার হয়েছে ফিশারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। কোর্স ট্যুর আয়োজনকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের এফআইডিসি থেকে কোর্স ট্যুর শেষে ক্যাম্পাসে ফিরে আসার সময় নোয়াখালীর মাইজদী শহরের দত্তেরহাট
এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফুল হক তুহিন এবং মৎস্য ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তারেক রহমান ইমন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী সূত্র জানা যায়, ট্যুরের শেষে বাসটি মাইজদী হয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে আসার সময় অভিযুক্ত বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তারেক ইমন দত্তেরহাট নামবে বলে বাস দাড় করায়। অমনি তার নেতৃত্বে ৭-৮ জন বহিরাগত বাসে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে এবং মেয়েদের গালিগালাজ ও অশ্লীল কথা বলতে শুরু করে।
হামলায় আহতরা হলেন- একই ব্যাচের নাসির, মুশফিক, রিশাদ ও মাসুম।
পুরো হামলার ঘটনায় ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আরিফুল হক তুহিন নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
তবে গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত তুহিন।
বাসে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী মেয়েরা জানান, কয়েকজন ছেলে বাসের ভেতরে প্রবেশ করে হামলা চালায়। বাজেভাবে গালিগালাজও করে। এমনকি ক্যাম্পাসে গিয়ে মুখ খুললে পরবর্তীতে দেখে নেবেও বলে হুমকি দেয়।
ট্যুরের বাসচালক জানান, চৌরাস্তা পার হওয়ার পর জায়গায় জায়গায় শিক্ষার্থী নামছে। দত্তের হাট আসার পর কেউ একজন বলতেছে আমাদের লোক নামবে। পরবর্তীতে বাসের দরজা খুলতে গেলে কয়েকজন লোক বাসে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায়। ৫-৬ মিনিটের মতো এ হামলা হয়।
ভুক্তভোগী ফিশারিজ বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাসির বলেন, আমরা মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামে যাই আমাদের কোর্স ট্যুরে। সেখানেও সব ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে ফিরে আসার সময় দত্তেরহাট আমার বন্ধু তারেক বাস থেকে নেমে যায়। তখন সে বাহির থেকে আমাকে বাস থেকে নামতে বলে। বাস থেকে না নামায় ৭-৮ জন ছেলে নিয়ে আমি এবং আমার বন্ধু মাসুম, মুশফিক এবং রিশাদের ওপর হামলা করে। তারা আমাদেরকে কিল, ঘুসি, লাথি অনবরত মারতে মারতে গালিগালাজ ও করে।
সব অভিযোগ অস্বীকার করে আরিফুল হক তুহিন বলেন, আমি শেষ মুহূর্তে ছিলাম, ধরো একটা অ্যাকসিডেন্ট হইলে যেমন মানুষ মানুষকে সেইভ করে না? আমি গিয়ে বাঁচাই। আমি মাইজদী থেকে দত্তের হাটে আসার সময় ঘটনা দেখে, ঘটনা শুনে গাড়ি থেকে নেমে ঘটনাস্থলে গিয়ে যে ঘটনা হয়েছে সেখান গিয়ে এক সাইডকে (দল) বাস থেকে বাহির করে আনি আর ভার্সিটিরগুলারে বাসে পাঠাই দিয়েছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত তারেক ইমন তার স্থানীয় বন্ধুদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে উঠার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ডিপার্টমেন্ট থেকে স্যার আমাকে ক্লাস প্রতিনিধি হিসেবে ট্যুর অ্যারেঞ্জড করার দায়িত্ব দেন। আমি আমার বন্ধুদের নিয়ে কাজ করি। নাসির বা তার অন্য বন্ধুদের সঙ্গে কাজ করি না। গত ২ দিন আগে সে ডিপার্টমেন্টের সামনে আমাকে গালিগালাজ করে জোর গলায় জিজ্ঞাসা করে যে সব কিছু তুই করবি নাকি স্যার কি তোকে একাই দায়িত্ব দিয়েছে কিনা। তখন আমি তাকে বলি যে স্যার আমাকে অফিসিয়ালি দায়িত্ব দিয়েছেন তাই আমি দায়িত্ব পালন করতেছি।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ট্যুরে যাওয়া ফিশারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক আরিফুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামে ফিল্ড যাওয়ার পর যখন আমরা নোয়াখালী ফিরছিলাম তখন শিক্ষার্থীরা গান গেয়ে গেয়ে ও নাচতে নাচতে আসছিল। কারো মাঝে কোনো ঝামেলা বা ঝগড়া বিবাদ দেখা যায়নি ট্যুরে গিয়ে ও আসার সময়। আমি মাইজদী বাজার ক্রস করার সময় নেমে যাই। বাসায় আসার পর জানতে পারি দত্তেরহাট এলাকায় বাস আটকিয়ে রেখেছে ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি শুনে আমি অবাক হয়ে যাই। পরে আমি প্রক্টর ও ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আনিসুজ্জামান বলেন, আমরা ঘটনার বিষয়টি জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে তাদেরকে একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তীতে তদন্তের সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২৩ দিন আগে রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫