Daily Bangladesh Mirror

ঢাকা, শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

লিড নিউজ

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা, বিশ্বকে চারিত্রিক বিনয় শেখালেন জেসিন্ডা

ডেস্ক রিপোর্ট:
১ দিন আগে শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫
# ফাইল ফটো

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন জেসিন্ডা আরডার্ন। আগামী মাসেই তিনি ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। আরডার্নের পদত্যাগের এই ঘোষণাকে তার ‘চারিত্রিক বিনয়ের প্রমাণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের মতামত বিভাগের সম্পাদক আন্দ্রেয়া পাপুক। বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) প্রকাশিত তার মতামতের সংক্ষিপ্ত

ভাষান্তর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে আরও একবার নিজের চারিত্রিক বিনয়ের প্রমাণ দেখালেন জেসিন্ডা আরডার্ন।

তিনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য আমি আমার সবটুকু দিয়েছি। কিন্তু এটি আমার থেকে অনেক কিছু কেড়েও নিয়েছে। আপনার ট্যাংক পরিপূর্ণ না থাকলে কাজটি করতে পারবেন না এবং করা উচিতও নয়। তাছাড়া, অনিবার্যভাবে আসা অপরিকল্পিত ও অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় কিছুটা সঞ্চয়ও থাকতে হয়।’

দেশ-বিদেশ উভয় জায়গায় অত্যন্ত সম্মানিত এবং চতুর এই নারী রাজনীতিবিদ তার স্বেচ্ছায় শীর্ষপদ ত্যাগ করছেন। এই পদক্ষেপ সবাইকে চমকে দিলেও সাধুবাদ পাচ্ছে।

আরডার্নকে অবশ্যই স্মরণ করা হবে। তবে তার সিদ্ধান্তকে সম্মান করা উচিত। এটি রাজনীতি ও ব্যবসায় বৈচিত্র্য অর্জনের চ্যালেঞ্জগুলোকে প্রতিফলিত করে। শুধু নারীদের সেখানে নিয়ে যাওয়া নয়, এটি তাদের ধরে রাখারও বিষয়। আমরা চাই, আরডার্নের মতো রাজনীতিবিদরা টিকে থাকুন। কারণ তারাই পারেন পরিবর্তন আনতে।

নারীরা তাদের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েনে ছিন্নভিন্ন হচ্ছেন, সেটিও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আরডার্নের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত। পাকিস্তানের প্রয়াত বেনজির ভুট্টোর পর ২০১৮ সালে সরকারপ্রধান থাকাকালে সন্তান জন্ম দেওয়া প্রথম নারী ছিলেন জেসিন্ডা আরডার্ন।

২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টির তৎকালীন ডেপুটি নেতা তানিয়া প্লিবারসেক শীর্ষপদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাতিল করেছিলেন। কারণ তিনি দলের নেতা হওয়ার সঙ্গে পরিবারের দায়িত্বগুলোর মধ্যে ‘সমন্বয়’ করতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়ার আরেক ফেডারেল সংসদ সদস্য কেট এলিস সন্তানদের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটানোর জন্য ২০১৯ সালে রাজনীতিই ছেড়ে দেন।

অতিসম্প্রতি, আরডার্নের বিরুদ্ধেও মানুষের মনোভাবে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছিল এবং তিনি জনমত জরিপে পিছিয়ে পড়ছিলেন। ক্রমাগত ব্যক্তিগত হুমকির মুখে ছিলেন তিনি। ষড়যন্ত্র ও টিকাবিরোধী গোষ্ঠীগুলো মহামারিকালীন পদক্ষেপগুলোর জন্য ক্ষুব্ধ হয়ে আরডার্নকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করছিল।

মাত্র ৩৭ বছর বয়সে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নারী সরকারপ্রধান হয়ে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছিলেন জেসিন্ডা আরডার্ন। ২০১৯ সালে ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে চরমপন্থির গুলিতে ৫১ জন নিহত হওয়ার পরে তিনি নিউজিল্যান্ডের বন্দুক আইন সংস্কার করেন। একই বছরের ডিসেম্বর নিউজিল্যান্ড উপকূলে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে ২২ জন মারা যাওয়ার পর আবারও তার সহমর্মিতা দেখা গিয়েছিল। মহামারি আরডার্নের মেধার পরীক্ষা নিয়েছে। বিশ্বের অন্যতম কঠোর লকডাউনের সঙ্গে ভাইরাসটি মোকাবিলায় কৃতিত্বের দাবিদার তিনি। দেশটির আদিবাসীদের কথা আসলে সেখানেও আরডার্নের দেশচালনার ‘ব্র্যান্ড’ প্রদর্শিত হয়। তিনি মাওরি নারী নানাইয়া মাহুতাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করেছেন। তার দল প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে নিউজিল্যান্ডে স্কুলের পাঠ্যক্রমে মাওরি ভাষাকে একীভূত করা হবে।

আরডার্ন যে বিরক্ত হতেন না, তা কিন্তু নয়। তবে এটি তার আরেকটি চারিত্রিক প্রমাণ যে, তিনি রাজনীতির রুক্ষতা ও গণ্ডগোলের ঊর্ধ্বে উঠে ভালো খেলোয়াড় হতে পারেন। একবার এক বিরোধী নেতাকে অপমান করে ক্ষমা চেয়েছিলেন আরডার্ন। তার সেই অপমানসূচক বক্তব্যের নথি দাতব্য অর্থ সংগ্রহের জন্য নিলামে তুললে এক লাখ নিউজিল্যান্ড ডলারে বিক্রি হয়। সেই নথিতে আরডার্নের অফিসিয়াল সই ছিল।

বিশ্বের সাবেক এক নম্বর টেনিস তারকা অ্যাশলে বার্টির টেনিস ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের মতো আরডার্নের ঘোষণায় আমাদের অস্বস্তি হয়তো বিশ্বব্যাপী সবাইকে গর্বিত করা রোল মডেলদের সঙ্গে বেশি সম্পর্কযুক্ত। তারা শক্তিশালী, দক্ষ, দৃঢ়, আবার চাপের মধ্যে অনুগ্রহও প্রদর্শন করেন। বিশ্বে এখন তাদের আগের চেয়েও অনেক বেশি প্রয়োজন।

সূত্র: জাগো নিউজ।

১ দিন আগে শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫

ইউটিউব সাবস্ক্রাইব করুন