Daily Bangladesh Mirror

ঢাকা, শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

লিড নিউজ

পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ২ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা চেয়েছে সেতু বিভাগ

ডেস্ক রিপোর্ট:
২২ দিন আগে শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫
# ফাইল ফটো

গতকাল পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো তৃতীয় সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ২ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা চেয়েছে সেতু বিভাগ।

সংশোধিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মুদ্রা মানের ওঠানামা, পাইল ফাউন্ডেশনের নকশা পরিবর্তন, আইন পরিবর্তনের কারণে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) ও আয়কর বৃদ্ধি, ৪০০ কেভি (কিলোভোল্ট) ট্রান্সমিশন টাওয়ার ফাউন্ডেশন প্ল্যাটফর্মের নকশার জন্য বৃদ্ধিপ্রাপ্ত

খরচ, মাওয়া নদীর প্রশিক্ষণ কাজের নকশা পরিবর্তন, অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অতিরিক্ত কাজ ও অন্যান্য সিভিল কাজ এবং সেতু উদ্বোধনের অনুষ্ঠান ইত্যাদির জন্য অতিরিক্ত তহবিলের প্রয়োজন হয়েছে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তৃতীয় সংশোধনীতে যেসব কাজের জন্য তহবিল চাওয়া হয়েছে, তার বেশিরভাগ কাজই শেষ। এখন শুধু বিল পরিশোধের জন্য নতুন অর্থায়ন প্রয়োজন।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া টিবিএসকে বলেন, "পদ্মা সেতু প্রকল্পটি আমাদের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প। এই প্রকল্পের জন্য যদি আরও অর্থায়নের প্রয়োজন হয়, তবে সেটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেওয়া উচিত। তবে এর আগে, সংশোধিত প্রস্তাব কমিশন যাচাই-বাছাই করবে।"

তৃতীয় সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রকল্পের ব্যয় এখন বেড়ে দাঁড়াবে ৩২ হাজার ৮৭৫.৫৪ কোটি টাকা; দ্বিতীয় সংশোধনে এই ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩০ হাজার ১৯৩.৩৮ কোটি টাকা।

এদিকে, গত জুনে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলেও প্রকল্পের কিছু অংশের কাজ এখনো চলছে। আগের প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নতুন প্রস্তাবে আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

সংশোধিত প্রস্তাবের কারণ:

বিবিএ কর্মকর্তারা জানান, মাটি নরম থাকায় ৪১টি পিয়ারের মধ্যে ২২টির পাইল ফাউন্ডেশন নতুন করে ডিজাইন করতে হয়েছে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন টাওয়ার ফাউন্ডেশন প্ল্যাটফর্মের নকশার কারণেও খরচ বেড়েছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঞ্চালন লাইন পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে যাচ্ছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ এই সঞ্চালন লাইনের মূল কাজ করলেও পিয়ারগুলো স্থাপন করা হয়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অংশ হিসেবে।

সংশোধিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সরকার বিভিন্ন সময়ে ভ্যাট ও আয়কর বৃদ্ধি করেছে। বিদেশি ঠিকাদারদের ক্ষেত্রে ভ্যাট এবং আয়কর সাড়ে ১০ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ হয়েছে। মূল সেতুর জন্য অতিরিক্ত ভ্যাট ও আয়কর বাবদ খরচ হয়েছে ৪০৫ কোটি টাকা এবং নদী প্রশিক্ষণের জন্য ২৮২ কোটি টাকা।

এছাড়া, প্রকল্প সমাপ্তির সময় বাড়ার কারণে কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট-২-এর চুক্তি মূল্য দাঁড়ায় ৯৫৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

সংশোধিত প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, কাজ শেষ করতে দেরি হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে। মূল সেতুর কাজ শেষ করতে অতিরিক্ত ৪৩ মাস এবং নদী প্রশিক্ষণের কাজ শেষ করতে ৫৫ মাস লাগবে, এতে বাড়ছে খরচ ও প্রকল্প সমাপ্তির সময়।

মাওয়া প্রান্তে সড়ক ও কালভার্ট সম্প্রসারণে অতিরিক্ত ১৯ কোটি টাকা প্রয়োজন।

সেইসঙ্গে, পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কিছু অতিরিক্ত কাজ করা হয়েছে; এরজন্য অতিরিক্ত তহবিল প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে সংশোধিত প্রস্তাবে।

প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে- অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যন্ত্রপাতি সরবরাহ, অপটিক ফাইবার ক্যাবল স্থাপন, টোল প্লাজার উভয় পাশের আইল্যান্ড সম্প্রসারণ, প্রস্তাবিত বাস-বে এবং ডেডিকেটেড ট্রাক লেন, সেতুর নিরাপত্তার জন্য প্রস্তাবিত আনসার ব্যারাক এবং অ্যাপ্রোচ রোড থেকে জাঞ্জিরা পর্যন্ত লাইন রোড নির্মাণ।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সময় যে ব্যয় হয়েছিল, তাও যোগ করা হয়েছে নতুন সংশোধিত প্রস্তাবে।

সূত্র: টিবিএস।

এছাড়া, জিপিওর ফার্স্ট ডে কভার ও স্ট্যাম্প প্রকাশের খরচ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ নোট ছাপানোর খরচও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের খরচ হিসেবে।

ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অতিরিক্ত অর্থায়ন প্রয়োজন বলেও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, চুক্তিতে ডলারের দর ৭৮ টাকা ৩০ পয়সা ধরা হলেও ডলারপ্রতি খরচ ১০৪ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ায়, এ বাড়তি ব্যয় হচ্ছে।

এছাড়া প্রস্তাবে মাওয়া নদীর প্রশিক্ষণ কাজের নকশা পরিবর্তনের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ২০১২ সালের বর্ষাকালে পুরাতন মাওয়া ফেরি টার্মিনাল এলাকা নদীর তীব্র স্রোতে ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার অবস্থান নদী প্রশিক্ষণ কাজের বরাবর ছিল। কাজের সময় দেখা গেছে, ভাঙনের ফলে নদীর রূপগত কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। নদী প্রশিক্ষণ কাজের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত এই অংশের প্রভাব সামলাতে নকশায় পরিবর্তন আনতে হয়েছিল। পরিবর্তিত নকশা অনুযায়ী কাজ সম্পাদন করতে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে।

সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মাওয়া নদী প্রশিক্ষণ এলাকায় ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৯ এবং ২০২১ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় কয়েকটি গর্ত সৃষ্টি হয়েছিল। সেই গর্ত পূরণে ব্যবহৃত হয় প্লাস্টিকের ব্যাগ/জিওব্যাগ; এতেও খরচ বেড়েছিল।

এছাড়া, নিরবচ্ছিন্ন ফেরি চলাচলের জন্য ফেরি টার্মিনাল কাঁঠালবাড়ি থেকে বাংলাবাজারে স্থানান্তরের জন্যও অতিরিক্ত ব্যয় প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে সংশোধিত প্রস্তাবে।

সূত্র: টিবিএস।

২২ দিন আগে শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫

ইউটিউব সাবস্ক্রাইব করুন