প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে নতুন রেকর্ড গড়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। মার্চের প্রথম ২২ দিনেই বাংলাদেশে প্রবাসী আয় এসেছে ২৪৪ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৯ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১১ কোটি ডলার দেশে আসছে, যা চলতি মাসের শেষে তিন বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছুঁতে পারে। এভাবে প্রতিদিন প্রায় ১১ কোটি ডলার (১৩৫৩ কোটি টাকা) করে প্রবাসী আয় আসছে। সবকিছু ঠিক থাকলে মার্চ
মাসে প্রবাসী আয়ের ইতিহাস সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। অর্থাৎ, এই মাসে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় তিন বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করবে, যা দেশের জন্য নতুন রেকর্ড হবে। এর আগে, দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল গত বছরের ডিসেম্বরে, প্রায় ২৬৪ কোটি ডলার। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে, প্রায় ২৫৩ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গত ৫ আগস্টের পর নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে প্রবাসী আয়ের গতি বেড়েছে। একইসঙ্গে হুন্ডি কারবারি এবং অর্থপাচার কমেছে। তাছাড়া, খোলা বাজারের মতোই ব্যাংকে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম পাওয়া যাচ্ছে। এসব কারণে প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এছাড়া, আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে রেমিট্যান্সের গতিপ্রবাহ আরও বেড়েছে।
আলোচিত ২২ দিনে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৫৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বিশেষায়িত ২ ব্যাংকের মধ্যে কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে প্রায় ২০ কোটি ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৭০ কোটি ৬৩ লাখ ৪০ হাজার ডলার। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪৫ লাখ ৭০ হাজার ডলার। তবে এ সময়ে রেমিট্যান্স আসেনি এমন ব্যাংকের সংখ্যা ৭টি। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক এবং পদ্মা ব্যাংক। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং উরি ব্যাংক।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আট মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৮৪৯ কোটি ডলার। অন্যদিকে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ১ হাজার ৪৯৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। সে হিসেবে গত অর্থবছরের প্রথম আট মাসের চেয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে ৩৫৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স বেশি এসেছে।
এর আগে, গত ডিসেম্বরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। এ নিয়ে অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্ট থেকে টানা ৭ মাস দুই বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ডলার, অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার, নভেম্বরে এসেছে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে এসেছে ২১৯ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ২৫৩ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।
একক মাস হিসেবে আগে কখনোই এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। এর আগে, করোনাকালীন ২০২০ সালের জুলাইয়ে ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। সেই রেকর্ড ভেঙেছে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। ২০২৪ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২৬৪ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার বেশি। গত বছরের ডিসেম্বরে এসেছিল ১৯৯ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুলাই মাস বাদে বাকি ১১ মাসেই দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।
২৬ দিন আগে শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫