২০০১ সালের কথা। তখন আমি আমাদের বাড়ির পাশে দক্ষিণ শাকতলী হাইস্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি। বাংলা বইয়ে একটি কবিতা ছিল সোনার নোলক নামে। কবিতাটির রচয়িতা আল মাহমুদ। ওই সময়ে কবিতাটি যতবারই পড়তাম,ততবারই ভালো লাগতো। এভাবেই আল মাহমুদ নামে কবিকে চিনতে শুরু করি। কবিতার শেষে কবি’র জীবনীতে জন্মতারিখ উল্লেখ থাকলেও মৃত্যু তারিখ উল্লেখ ছিল না। তাই কবি জীবিত কি মৃত আমার ছোট্ট মাথায় ধারণা জন্মেনি
তখনো।২০০২ সালে ৭ম শ্রেণীতে পড়াকালীণ অবস্থায় আমার লেখালেখির সূত্রপাত হয়। ২০০৫ সালের আগষ্টে ঢাকার কেরাণীগন জের হাসনাবাদে যাই চাচাতো ভাইদের বাসায়। বুড়িগঙ্গার পাশ ঘেঁষা জনপদটিতে সেখানে নিয়মিত দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা পড়া হতো চাচাতো ভাইদের বাসায়। পত্রিকার সাহিত্য পাতায় কবিতা এবং সম্পাদকীয় পাতায় দেশের প্রথম সারিদের কবি-লেখকদের সাথে ওই সময়কার দেশের প্রধান কবি আল মাহমুদ স্যারের কলাম দেখতে পেতাম। আমি নিজেও টুকটাক লেখালেখি করতে করতে ২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে কুমিল্লার লাকসাম থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সময়ের দর্পণে কাজ শুরু করি। সংবাদ পাঠানো ও তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি নিজের লেখা কবিতা, গল্প পাঠাই এবং ফারুক আল শারাহ ভাইয়া তা গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করতেন ও সংশোধন করে দিতেন। অবশ্য এরপরই আমার লেখা কবিতা-ছড়া সংশোধন করে দিতেন কবি দীপ্র আজাদ কাজল। মাহমুদুল হাসান নিজামী, এস এম আবুল বাশার, ফারুক শাহরিয়াও বেশকিছু লেখা এডিট করে দিয়েছেন। ধীরে ধীরে প্রিয় কবি থেকে প্রিয় ব্যক্তিতে রুপান্তরিত হতে থাকেন আল মাহমুদ স্যার। ২০০৬ সাল থেকে নিয়মিতভাবে জাতীয় দৈনিক ও ম্যাগাজিনের সাহিত্য পাতা যেদিন ছাপতো,ওই দিন পত্রিকা কিনতাম ও পড়তাম। বিভিন্ন পত্রিকা পড়ার সুবাধে কবি আল মাহমুদের লেখা ও জীবনী পড়ার সুযোগ হয়। দীর্ঘদিন পর ২০১৫ সালের জুন মাসে বাকস আয়োজিত ঢাকার বাংলামোটর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ হয়। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশের প্রধাণতম কবি আল মাহমুদ। আমি সেই অনুষ্ঠানে পরিচয় পর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ও কবিতা পাঠ করেছিলাম। সেই অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কবি আসাদ চৌধুরীসহ দেশের প্রথম ও দ্বিতীয় সারির চেনামুখের কবি লেখকবৃন্দ। এমন একটি মহতি অনুষ্ঠানে কবির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য বাকস পরিবারকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। অবশ্য ঢাকায় কবি-লেখকদের সাথে এটিও ছিল আমার প্রথম প্রোগ্রাম করা। এরপর কবির সাথে বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকবার দেখা হয়। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর মাসে ও কবির নিজস্ব বাসা মগবাজারের ওয়ারল্যাসের ওখানে দুইবার গিয়েছি। কবি অসুস্থ থাকায় কবির বড় ছেলে শরীফ মাহমুদ (ইতিমধ্যে তিনিও মারা গেছেন)ইস্ততবোধ করায় কবি আবিদ আজম ভাইয়ের মাধ্যমে কবির বেডরুমে প্রবেশ,অবস্থান ও দীর্ঘক্ষণ থেকেছিলাম, তাও অনেক সময় ধরে, যা স্মৃতির পাতায় যুগযুগ ধরে ধারণ(বন্দি)হয়ে থাকবে। সেই কবি এই অসময়ে এই দু:সময়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাত ১১টা ৫ মিনিটে ধানমন্ডি ইবনেসিনা হসপিটালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চলে যাবেন,ভাবতেই চোখের কোনে অশ্রুসিক্ত হয়ে আসছে বারবার। যদি ও কবি পরিণত বয়সে প্রায় ৮৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছেন।
কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, বাংলাসাহিত্য থেকে একজন উজ্জল নক্ষত্র টুস করে আকাশ থেকে খসে পড়েছে। যদি দেহ চলে গেছে ঠিক, লেখা তো চলে যাইনি। সাহিত্য ভান্ডার তো রেখে গেছেন তিনি। যা কিয়ামত পর্যন্ত আমরা অমর এক কবির পরিচয়ে পরিচিত হবো বিশ্ব দরবারে। অপূরনীয় সাহিত্য ভান্ডার সেদিন একটি বিশাল ছাদ হারিয়েছে। কবির লেখনী, কর্ম,বই, স্মৃতিমাখা বস্তু কিংবা স্মৃতিময় স্থানগুলো ছাড়া বাস্তবিক কবিকে আমরা আর কখনো দেখতে, ছুতে ও সরাসরি কথা বলতে পারবোনা। কবি ছিলেন আপাদমস্তক একজন লেখালেখির মানুষ। লিখতেন, পড়তেন ও কলম-কাগজ নিয়ে পড়ে থাকতেন। এমন কবি মানুষ আল মাহমুদ স্যারকে সত্যি আমরা মিস করবো খুব।
২৬ দিন আগে শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫