অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত গণঅভ্যুত্থান এবারের বইমেলায় আমাদের সামনে নতুন তাৎপর্য নিয়ে এসেছে। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। এ বছর বইমেলার প্রতিপাদ্য হলো জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান এবং তার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ
গড়ে তোলা।ড. ইউনূস বলেন, একুশ মানে আত্মপরিচয়ের মুখোমুখি হওয়া। একুশে মানে নিরন্তর সংগ্রাম। নিজের সীমানাকে আরও প্রসারিত করা। এবারের একুশের প্রেক্ষাপট আমাদের নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, বরকত, সালাম, রফিক, জব্বারের বুকের রক্তে যে অঙ্গীকার মিশে আছে, তা জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানকে নিশ্চিত করার মহাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। এই মহাবিস্ফোরণ দেশকে পাল্টে দিয়েছে। এ বিস্ফোরণ আমাদের মধ্যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় সৃষ্টি করেছে। ১৭ কোটি মানুষের প্রতিটি সত্তায় এই প্রত্যয় গভীরভাবে প্রোথিত হয়েছে। অমর একুশের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা এই প্রত্যয়ে শপথ নিতে এসেছি।
তিনি বলেন, একুশ আমাদের মূল সত্তার পরিচয়। একুশ আমাদের ঐক্যের মজবুত বন্ধন। এই বন্ধন ছোট-বড়, যৌক্তিক-অযৌক্তিক, দীর্ঘস্থায়ী-ক্ষণস্থায়ী সব বিভেদের ঊর্ধ্বে। এজন্যই সব জাতীয় উৎসব, সংকট বা দুর্যোগে আমরা শহীদ মিনারে ছুটে যাই। সেখানে আমরা স্বস্তি পাই, শান্তি খুঁজে পাই, সমাধান খুঁজে পাই। সাময়িকভাবে আমাদের উদ্দেশ্য ও ঐক্য খুঁজে পাই। একুশ আমাদের মানুষকে এভাবে গড়ে তুলেছে। একুশ আমাদের পথ দেখায়।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, মাত্র ছয় মাস আগে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান জাতিকে ঐতিহাসিক গভীরতায় ঐক্যবদ্ধ করেছে। এর ফলে আমরা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও মানবিকভাবে বিপর্যস্ত একটি দেশকে দ্রুততম সময়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার সাহস পেয়েছি।
তিনি বলেন, একুশের টান বয়সের ঊর্ধ্বে, প্রজন্মের ঊর্ধ্বে। একুশের টান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বিস্তৃত হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই টান আরও গভীর হয়েছে। আমাদেরকে সাহসী করেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। দুঃস্বপ্নের বাংলাদেশকে ছাত্র-জনতা নতুন বাংলাদেশে রূপান্তরিত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তারা অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে। আমাদের তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীরা রাস্তার দেয়ালে তাদের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা ও দাবিগুলো অবিশ্বাস্য দৃঢ়তায় তুলে ধরেছে। আমাদের রাস্তার দেয়াল এখন ঐতিহাসিক দলিলে পরিণত হয়েছে। এগুলোর স্থান এখন আমাদের হৃদয়ে এবং ভবিষ্যতে জাদুঘরে সংরক্ষণ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
বইমেলার আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, তারা এই দেয়ালচিত্রগুলো মেলায় আসা-যাওয়ার পথে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন।
১৭ দিন আগে শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫