বিশ্বের অন্যতম অজনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত প্রেসিডেন্ট দিনা বলুয়ার্তেকে অপসারণের এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে পেরুর কংগ্রেস সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে কংগ্রেস সভাপতি জোসে জেরিকে দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ করিয়েছেন।
স্থানীয় সময় শুক্রবার মধ্যরাতের পরপরই এই ভোটাভুটি ও শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে, একাধিক রাজনৈতিক দল বলুয়ার্তের বিরুদ্ধে অযোগ্যতার
অভিযোগ তুলে তাকে অপসারণের প্রস্তাব পেশ করে। প্রস্তাব দাখিল, ভোটাভুটি এবং নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ—সবকিছুই ঘটে মাত্র এক ঘণ্টারাও কম ব্যবধানে।
২০১৬ সালের পর থেকে পেরুর সপ্তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণকারী জেরি ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিবেন। যা বোলুয়ার্তের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগগুলোর একটি ছিল। তিনি আরো বলেন, ‘মূল অপরাধী চক্রগুলো রাস্তায় আছে। আমাদের অপরাধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।’
৩৮ বছর বয়সী হোসে জেরি কনজারভেটিভ দল সোমোস পেরু এর সদস্য এবং জুলাইয়ে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। ফলে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে কমবয়সী রাষ্ট্রপ্রধানদের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন।
বোলুয়ার্তে অপসারণের পর কংগ্রেস ভবন ও ইকুয়েডর দূতাবাসের সামনে মানুষের ভিড় দেখা যায়। বোলুয়ার্তে হয়তো আশ্রয়ের জন্য সেখানে যেতে পারেন বলে ধারনা করা হয়।
কেউ কেউ পতাকা নাড়িয়ে, নাচ ও বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে উদযাপনও করেন। কংগ্রেসে অপসারণের কিছুক্ষণের মধ্যেই বোলুয়ার্তে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ‘যে কংগ্রেস ২০২২ সালের শেষ দিকে আমাকে শপথ করিয়েছিল, সেই কংগ্রেস আজ আমাকে অপসারণের ভোট দিয়েছে। এটি আমাদের দেশের গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতার জন্য তাৎপর্যপূর্ণ।’
বৃহস্পতিবার রাতে কংগ্রেস বোলুয়ার্তেকে সংসদে এসে আত্মপক্ষ সমর্থনের আহ্বান জানায়।
কিন্তু তিনি উপস্থিত হননি। ফলে সংসদ সদস্যরা যথেষ্ট ভোট পেয়ে খুব দ্রুত তাকে অপসারণের কাজ শুরু করে। ৬৩ বছর বয়সী বোলুয়ার্তের জনপ্রিয়তা ছিল অত্যন্ত কম। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে লাভবান হয়েছেন এবং তার সরকারের সময় বিক্ষোভ দমন অভিযানের দমন ও পীড়নের জন্য দায়ী। তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বোলুয়ার্তের অপসারণের মধ্য দিয়ে দেশটিতে আবারও নেতৃত্ব পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত রইল। বর্তমানে তিনজন সাবেক প্রেসিডেন্ট কারাগারে আছেন। এর আগে কংগ্রেস বোলুয়ার্তেকে অপসারণের কয়েকটি প্রস্তাব খারিজ করেছিল। তবে এবার ডানপন্থী দলগুলো (রাফায়েল লোপেজের পপুলার রিনিউয়াল ও কেইকো ফুজিমোরির পপুলার ফোর্স) অংশগ্রহণ করে প্রস্তাবটি পাশ করতে ভূমিকা রাখে। এই দুই নেতা ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পেদ্রো কাস্তিয়ো সংসদ ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করার পর গ্রেপ্তার হলে বোলুয়ার্তে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ক্ষমতায় আসেন। কাস্তিয়োর পতনের পর দেশজুড়ে বিশেষ করে গ্রামীণ ও আদিবাসী এলাকায় সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করে, বোলুয়ার্তের সরকার বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে। এ ছাড়া তিনি ঘোষণাবিহীন সম্পদ ও রোলেক্স ঘড়ির মালিকানা নিয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জড়ান। জুলাইয়ে তিনি নিজের বেতন দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্তও নেন।
সূত্র : রয়টার্স
৫ দিন আগে রবিবার, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৫
