মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ২৪ মে যে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে সে ভিসা নীতির আওতায় দুই ডজনের বেশি বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের দূতাবাস বিষয়টি অবহিত হয়েছে এবং এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র
জানিয়েছে।সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গত ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন এবং ২৯ জুলাই ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির সময় সংঘটিত ঘটনাবলির ভিডিও ফুটেজ এবং অন্যান্য আনুষাঙ্গিক বিষয় গুলো বিশ্লেষণ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এই দুইজন ডজন ব্যক্তির অর্ধেকের বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা। একাধিক ব্যক্তি রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মী।
জানা গেছে, ১৭ জুলাই বিকেল বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুলের সামনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলা করা হয়। এই হামলার ঘটনায় দুটি বিষয় খতিয়ে দেখা হয়েছে। প্রথমত, যারা হামলাকারী তারা শান্তিপূর্ণ ভোট প্রয়োগে বাধা প্রদান করেছে, যা ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত। এই ঘটনার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সংগ্রহ করেছে এবং যারা চিহ্নিত হয়েছে তারা সকলেই ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে। এছাড়াও ওই সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা কি ছিল-সেটি নিয়েও মার্কিন দূতাবাস এবং মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে তদন্ত করেছে এবং এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যার যার ভূমিকা সঠিক ছিল না তাদেরকেও ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হবে। এই বিষয়টি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
শুধু তাই নয়, গত ২৯ জুলাই বিএনপি ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এই অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে যাত্রাবাড়ীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে পুলিশের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। সেখানে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ওপর হামলা করা হয়। এই হামলার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ এবং অন্যান্য তথ্যাদি বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং এটির সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রগুলো বলছে, ২৪ মে থেকে যে ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয়েছে সে ভিসা নীতি যেকোন সময় যেকোনো ক্ষেত্রে প্রয়োগ হতে পারে। মূলত চারটি ক্ষেত্রে যদি ব্যতয় ঘটে তাহলে সে ভিসা নীতি প্রয়োগ হবে।
১. যদি কেউ শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে বাধাগ্রস্ত করে: মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করছে, ঢাকা-১৭ আসনে ভোটগ্রহণের শেষ পর্যায়ে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর হামলা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথে বাধা।
২. যদি কোনো প্রার্থীর ওপর ভয়-ভীতি বা পেশি শক্তির প্রয়োগ করা হয় যেটি ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ক্ষেত্রে ঘটেছে।
৩. যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধা সৃষ্টি করে বা যথাযথ দায়িত্ব পালন না করতে পারে যেটি ঢাকা-১৭ আসনে ঘটেছে।
৪. যদি স্বাধীন মতপ্রকাশ বা সমাবেশের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পেশি শক্তির প্রয়োগ করে বা বাধা প্রদান করে যেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে যে ২৯ জুলাই যাত্রাবাড়ী এলাকায় ঘটেছে এবং বিরোধী মতের ওপর শারীরিক বা শারীরিক নিপীড়িন হয়, ২৯ তারিখে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ওপর যে ঘটনা ঘটেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন দূতাবাস এবং বাংলাদেশি কিছু মানবাধিকার সংগঠনের প্রদত্ত রিপোর্ট যাচাই বাছাইয়ের ভিত্তিতে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতে পারে। তবে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে কিনা তা সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
৩ দিন আগে শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫