Daily Bangladesh Mirror

ঢাকা, রবিবার, জুলাই ২০, ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

মুক্তমত ও ফিচার

টালমাটাল বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো

মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন:
২ দিন আগে রবিবার, জুলাই ২০, ২০২৫
# ফাইল ফটো



কিভাবে হল,/ কারা দায়ী/ এবং /বর্তমানে করনীয় সম্ভাব্য  পদক্ষেপ কি কি হতে পারে /-বা বাংলাদেশ ব্যাংকের বা কি করনীয় ?


মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন: 


"ভেন্টিলেশন" -এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে কোনরকমে টিকিয়ে রাখা হচ্ছে বা চেষ্টা করা হচ্ছে বলা চলে।


পুরো অর্থনীতি,তথা ব্যবস্থাপনা  কাঠামো একরকম বিস্ময়করভাবে  চলে যাচ্ছে এটা নিঃসন্দেহেই বলা চলে যা থেকে দ্রুত পরিত্রাণের

ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পুরো অর্থনৈতিক কাঠামোই ভেঙে পড়তে পারে।। 


পরিণাম হতে পারে ভয়াবহ, পুরো দেশে ঘটতে পারে ভয়াবহ  অর্থনৈতিক বিপর্যয় । এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।। 


কিছু বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করলেই বিষয়টি অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে পরিলক্ষিত হয়। 


 বিভিন্ন সূত্র থেকে  প্রাপ্ত তথ্যাবলি বিশ্লেষণের মাধ্যমে পরিলক্ষিত হয় যে, 


সমগ্র ব্যাংকিং সেক্টরে নন-পারফর্মিং ঋণের (NPL) পরিমাণ:-


সর্বশেষ (২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে  নন-পারফর্মিং (NPL) ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে ব্যাংকিং সেক্টরে, এ যাবতকালের ইতিহাসে বিরল একটি রেকর্ড।। 


 ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে এই পরিমাণ ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বলে অন্য একটি মাধ্যমে উঠে এসেছে ,যা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা বেশি। 


এই তথ্যে অবলোপনকৃত ঋণও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।


 মোট বিতরণকৃত ঋণের ১২.৫৬% এখন নন-পারফর্মিং(NPL)।


 মূলধন ঘাটতি:-


  চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) শেষে দেশের ২০টি ব্যাংকে মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। আর  সবগুলো  ব্যাংকএর সমন্বিত  মূলধন ঘাটতি ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা।


+(ফরেন্সিক ইনভেস্টিগেশন শেষ হলে অবস্থা কেমন হতে পারে?)-


যদি ফরেন্সিক ইনভেস্টিগেশন হস্তক্ষেপ মুক্ত ভাবে  সম্পন্ন হয়, তবে এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব থাকতে পারে,যেমন :-


খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র উন্মোচন: 


বর্তমানে খেলাপি ঋণের যে পরিমাণ দেখানো হচ্ছে,,,,,,

ফরেন্সিক ইনভেস্টিগেশন এর প্রকৃত চিত্র উন্মোচন সঠিকভাবে পাওয়া গেলে , তা আরও বেশি হবার সম্ভাবনাই বেশি। অনেক ঋণ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় পুনঃতফসিল বা অবলোপন করা হলেও বাস্তবে সেগুলো খেলাপি রয়ে গেছে।।


(যেমন কাজির গরু গোয়ালে নেই কিন্তু কাগজে বা রেকর্ড পত্রে রয়েছে, ঠিক তদ্রূপ) 


দুর্নীতির প্রমাণ:-


 ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়ার ইনভেস্টিগেশন এ  অনিয়ম, দুর্নীতি, যোগসাজশ,স্বজন প্রীতি  এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের সুস্পষ্ট প্রমাণ বেরিয়ে আসতে পারে।। 

এতে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নামও উঠে আসতে পারে।।


ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা আরও খারাপ হওয়া:-


 যদি প্রকৃত খেলাপি ঋণ এবং এর পেছনের দুর্নীতি উন্মোচিত হয়, তবে কিছু ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা আরও নাজুক প্রমাণিত হতে পারে।


 বিশেষ করে দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য এটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। +(যা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন কার্যক্রমের উদ্যোগে প্রতিফলিত হচ্ছে।) 


 আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ :-


জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে  যা সমগ্র  ব্যাংকিং সেক্টরে  এক ধরনের ভীতিকর পরিবেশ  তৈরি করতে পারে, তবে তা ভবিষ্যতে ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে  অনিয়ম কমাতে সাহায্য করতে পারে।


কিন্তু  বিনিয়োগকারীদের আস্থায় প্রভাব পড়তে পারে প্রাথমিক পর্যায়ে :-


 প্রাথমিক পর্যায়ে এটি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে,ধাক্কা খেতে পারে দেশের বাণিজ্যিক খাত।


 তবে দীর্ঘমেয়াদে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পেলে তাদের আস্থা ফিরে আসতে পারে।


ব্যাংকিং সেক্টরে এই বেহাল অবস্থার জন্য কে বা কাদের কাদেরকে দোষী হিসেবে সাব্যস্ত  করা যায়? 


বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের এই নাজুক অবস্থার জন্য মূলত নিম্নলিখিত পক্ষগুলো দায়ী:-


 অদক্ষ ঋণ ব্যবস্থাপনা ও যাচাইকরণ:-


 ঋণ বিতরণের সময় যথাযথ যাচাই-বাছাই না করা 

এবং বিবিধ অনিয়ম।


(অবৈধ অর্থের লেনদেন,  নানাবিধ উপ-টোকোন  ও সুযোগ সুবিধার বিনিময়।) 


দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাব:

ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা এবং এমনকি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কিছু অংশের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার।।


 রাজনৈতিক প্রভাবও এর একটি বড় কারণ।


 ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি:-


কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ পরিশোধ না করে বিভিন্ন কৌশলে ঋণখেলাপি হয়েও পার পেয়ে বসে আছে।।


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুর্বল তদারকি:

বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং অনেক সময় প্রভাবশালী গোষ্ঠীর চাপে সঠিক পদক্ষেপ নিতে না পারা।


(এই বিষয়টি চিরতরে দূরীভূতকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে তথা-


 রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে হবে দেশাত্মবোধ ও দেশপ্রেমের পরিচয় দেখিয়ে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ।) 


বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা:


কিছু ক্ষেত্রে খেলাপি ব্যবসায়ীদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।


যা ইতিমধ্যে আংশিক  প্রমাণিত হয়েছে এবং আরো প্রমাণিত হবে বলে,  বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে,যদিও এখনো এই বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম চলমান/প্রক্রিয়াধীন ।


দুর্বল আইনি কাঠামো ও প্রয়োগ:-


 ঋণ আদায়ের জন্য দুর্বল আইনি কাঠামো এবং এর প্রয়োগের অভাব।

" কিছু কর্মকৌশল/প্রতিষেধকমূলক ব্যবস্থা ব্যাংক গুলোকে বর্তমান  ভঙ্গুর অবস্থা থেকে,,,,, উত্তরণের নিয়ামক হিসেবে সহায়তা করতে পারে,"-


 সেগুলো কি?  


ব্যাংকগুলোকে রক্ষা করার নিমিত্তে করণীয় কয়েকটি কার্যক্রম নিচে তুলে ধরা হলো :-


কঠোর আইন প্রয়োগ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা:-

ঋণ বিতরণে কঠোর নিয়মকানুন অনুসরণ করা এবং যথাযথ যাচাই-বাছাই নিশ্চিত করা।।


(স্বজন- প্রীতি একেবারেই বন্ধ করতে হবে।) 


ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।।


(এ বিষয়ে নতুন আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।।) 


 ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ব্যাংকগুলোকে সকল ধরনের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা।


 বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ:-

 "বাংলাদেশ ব্যাংক"-কে আরও শক্তিশালী ও স্বাধীন করে তোলা, যাতে তারা কোন প্রভাব ছাড়াই তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চালাতে পারে।।


বিশেষ ক্ষমতা বলে দুর্বল ব্যাংকগুলোতে হস্তক্ষেপ করে প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করা।।


(যদিও ইতিমধ্যে কয়েকটি ব্যাংকে প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তবে তাও যথেষ্ট নয় বলে প্রতিীয়মান হচ্ছে।) 


 সম্পদ পুনরুদ্ধার কোম্পানি (Asset Management Company) এক্ষেত্রে সহযোগী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।। 


উদাহরণ হিসেবে : একটি/একাধিক  স্বাধীন-" সম্পদ পুনরুদ্ধার কোম্পানি"-

 গঠন করে খেলাপি ঋণগুলো তাদের নিকট বিক্রয় করে দিয়ে

সেগুলো আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।। 

 (প্রয়োজনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন আইন অথবা প্রজ্ঞাপন জারি করে হলেও।) 


আইনি সংস্কার:-

ঋণ আদায় প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত করার জন্য বিদ্যমান আইন ও বিচারিক প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করা। (কঠোর শাস্তি মূলক ব্যবস্থা,,,,,, প্রয়োজনে ঋণ- খেলাপি  ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিগত বা ব্যবসা  প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা, অবকাঠামো  ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিক্রয়, ফ্রিজ করা অথবা ক্রোকের মতন কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যক্তি মালিকানাধীন স্থাবর 

-অস্থাবর  জায়গা-সম্পত্তি, 

এমনকি আবাসিক স্থাপনা পর্যন্ত দখলে নিয়ে কালক্ষেপণ না করে দ্রুততম সময়ে, নিলাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের উদাহরণ/নজির  তৈরি করতে হবে।।  ) 


প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন:-

ঋণ পর্যবেক্ষণ ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করা। প্রয়োজনে এক্ষেত্রে উন্নত দেশের ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম অনুসরণ করা যেতে পারে।


মূলধন পুনর্গঠন:

মূলধন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বা 

অন্য কোনোভাবে মূলধন যোগান দেওয়া তবে তা শর্তসাপেক্ষে হওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে একই সমস্যার পুনরাবৃত্তি না হয়।।


 (ইতিমধ্যেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক এর বিশ্বস্ত-সূত্র থেকে জানা গেছে।।) 


ব্যাংকের সংখ্যা কমানো ও একীভূতকরণ:-

প্রয়োজনে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সাথে একীভূত করা বা দুর্বল ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া। (যার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে।।) 


 ব্যাংকিং কমিশন গঠন:-


 ব্যাংকিং খাতের সমস্যা চিহ্নিত ও দীর্ঘমেয়াদী


 সমাধানের জন্য একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা যেতে পারে।।


পুনশ্চ :   (কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে)


এই পদক্ষেপগুলো সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে  বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টর ধীরে ধীরে বর্তমান  বিরাজমান  সমস্যাগুলো কাটিয়ে শক্তিশালী অবস্থানে আসতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন বিভিন্ন অর্থনীতি বিশ্লেষক,/ অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো, / অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র -ব্যাংকার গণ, /"Money market and Capital market "-বিশেষজ্ঞগণ/ এবং বাংলাদেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদগণ/।। 


(লেখক :মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন (চাকুরী থেকে অব্যবতী -প্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক) ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।।)

২ দিন আগে রবিবার, জুলাই ২০, ২০২৫

ইউটিউব সাবস্ক্রাইব করুন