গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আরও দুই বছর সময় দেওয়া উচিত। দেশের সংস্কারের ক্ষেত্রে এই সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, যদি শেখ হাসিনার পতন না ঘটত, তাহলে এই সরকার আরও ৪ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারত। সুতরাং, দুই বছর সময় দিলে কোনো ক্ষতি হবে না।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় ডাকসু ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত
এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সভার বিষয়ে রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নুরুল হক নুর বলেছেন, যদি কোনো উপদেষ্টা ব্যর্থ হন, তাদের সমালোচনা করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনও করতে হবে, কিন্তু দেশের সংস্কারের কাজ এবং গণহত্যার বিচারগুলো এই সরকারকেই করতে হবে।
তিনি গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব সেক্টরে তাদের সমর্থকদের বসানোর কথা উল্লেখ করে বলেন, শুধুমাত্র পুলিশের সংস্কার নয়, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, সশস্ত্র বাহিনীসহ সব ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন।
ডাকসু ভবনে ২০১৯ সালের ২২ ডিসেম্বর ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের হামলায় ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা আক্রান্ত হন। ওই হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিচার ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবিতে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
নুরুল হক নুর বলেন, ২০১৯ সালের ২২ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী সাদ্দাম ও সনজিতের নেতৃত্বে হামলা হয়েছিল। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে কল দিয়েও সহায়তা পাওয়া যায়নি, বরং প্রক্টর গোলাম রব্বানী ছাত্রলীগকে সহযোগিতা করতেন। তিনি বলেন, গোলাম রব্বানী একজন শিক্ষক নামের কলঙ্ক, একজন বিকৃত মনের মানুষ। ছাত্রলীগের সব অপকর্মের দায় এই গোলাম রব্বানী এবং সাবেক ভিসি আখতারুজ্জামানকেই নিতে হবে।
নুর আরও বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুমে শিক্ষার্থীরা মানবেতর জীবনযাপন করে। সেখানে পড়াশোনা করে কেউ কেউ বিসিএস ক্যাডার হয়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের খাবারের মান এত খারাপ যে, তা খেলে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তিনি দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও খাবারের বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং সারা দেশে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তিনি বলেন, আগামী দিনে দেশের নেতৃত্বে তরুণরাই আসবে।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, শুধুমাত্র ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় এদেশীয় র’-এর এজেন্ট সাদ্দাম ও সনজিতের নেতৃত্বে ডাকসুতে নারকীয় হামলা করা হয়। ৫ বছর ধরে বিচারহীনতার এই পরিস্থিতি চলছে। পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন দেয়, যেখানে বলা হয়, কোনো হামলা হয়নি, হালকা ধাক্কাধাক্কি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ওই সময়ে শিক্ষক নামের কলঙ্ক প্রক্টর গোলাম রব্বানীকে ফোন দিলে, তিনি বলেন, বন্ধ ক্যাম্পাসে কেন এসেছি। তাকে বারবার কল দিলেও তিনি আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি। সাবেক উপাচার্য আখতারুজ্জামানও এ হামলায় ইন্ধন দিয়েছেন। এসব শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করতে হবে, যারা হামলা করেছে, তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। অবৈধভাবে যারা ডাকসুতে বিজয়ী হয়েছেন, তাদের পদ বাতিল করতে হবে এবং ডাকসু নির্বাচনের তদন্ত করতে হবে।
রাশেদ খান বলেন, যে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের হত্যা ও নির্যাতন করেছে, তাদের নাম মুছে ফেলতে হবে। এছাড়া, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষক অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন, ছাত্রলীগের ক্যাডাররা প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে চাকরি করছে। এদের সবাইকে চাকরিচ্যুত করতে হবে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সানাউল্লাহ। সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম। আলোচনা সভায় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ ও অর্থনীতির শিক্ষক রাশাদ ফরিদী। এছাড়া বক্তব্য দেন ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান, ডাকসু হামলায় আহত ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, সাবেক ছাত্রনেতা আবু হানিফ, মাহফুজুর রহমান খান, মনজুর মোর্শেদ মামুন, বরিউল হাসান প্রমুখ।
সূত্র: ইত্তেফাক
২৮ দিন আগে রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫