ঝড়টি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তার আশেপাশের এলাকায় গভীর নিম্নচাপটি অবস্থান করছে এবং উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হওয়ার পথে এটি ডান দিকে বাঁক নিচ্ছে। এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় হালকা বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টির নাম রাখা হয়েছে ‘ডানা’,
যা কাতারের দেওয়া। এর অর্থ বড় মুক্তা বা বিগ পার্ল।আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৪ নম্বর বিশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) সকাল ৬টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ৬২০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা থেকে ৬৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
এ কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং এর আশপাশের এলাকায় উত্তাল সাগর অবস্থান করায় সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম জানান, ঝড়টি ডান দিকে বাঁক নিয়েছে। শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল এটি উড়িষ্যা এবং পশ্চিমবঙ্গের মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে যাবে। কিন্তু ডান দিকে বাঁক নেওয়ার কারণে পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সাদেকুল আলম বলেন, ঝড়টি ধীরগতিতে অগ্রসর হওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার বিকেল বা রাতে উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ নির্ধারণে উপরের স্তরের বাতাসের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এখন পর্যন্ত উপরের বাতাসের গতি বাংলাদেশের উপকূলের অনুকূলে নয়, তাই ঝড়টির বাংলাদেশে আঘাত হানার সম্ভাবনা কম। ঝড়টি উড়িষ্যা এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূল দিয়ে অতিক্রম করতে পারে।
তিনি আরও জানান, ঝড়টির ব্যাস প্রায় ১০০ কিলোমিটার, এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার বৃষ্টি হতে পারে।
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তায় জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি বৃহস্পতিবার সকালে উড়িষ্যা এবং পশ্চিমবঙ্গের মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে অতিক্রম করতে পারে। এ সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৮৮ থেকে ১১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা আরও জানান, ঝড়টি যদি উপকূলে আঘাত হানে, তাহলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা, সাতক্ষীরা, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা অঞ্চলে এর প্রভাব পড়তে পারে, তবে এর সম্ভাবনা কম। বাতাসের গতিবিধির কারণে ঝড়টি দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গের দিকে ধাবিত হতে পারে।
বঙ্গোপসাগরে এপ্রিল-মে এবং সেপ্টেম্বর-নভেম্বর সময়কালে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। ১৮৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত অক্টোবর মাসে বঙ্গোপসাগরে ৯৪টি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে, যার মধ্যে ১৯টি বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হেনেছে।
২৮ দিন আগে শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫