ভারত-চীন-রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যসহ সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের চমৎকার সম্পর্ক বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেছেন, আমাদের সরকার বাংলাদেশের জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার এবং এই সরকার জনগণের সরকার।
রোববার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে চীন ও
নেপালের রাষ্ট্রদূত এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।সাক্ষাৎকালে চীন ও নেপাল উভয় দেশের রাষ্ট্রদূত তাদের নিজ নিজ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিনন্দনপত্র বাংলাদেশের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের হাতে তুলে দেন।
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন আমাদের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী। চীন থেকে আমরা বেশি আমদানি করি, কম রপ্তানি করি। আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধির আলোচনায় চীন বাংলাদেশ থেকে পাট, চামড়া, মাংস, সি-ফুড, মাছ এবং আম আমদানিতে আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। জুলাই বা আগস্ট মাসে আমরা আম রপ্তানি শুরু করতে পারি। চীন একটি বড় বাজার। সেখানে আমাদের পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিয়ে আলোচনা করেছি।
বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। আমাদের জনগণও তাদের দুয়ার উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। কিন্তু এখন কক্সবাজারে স্থানীয়রাই সংখ্যালঘু, রোহিঙ্গার সংখ্যা বেশি।
মন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারে এখন নিরাপত্তা, মাদকসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা বলেছি, রোহিঙ্গাদের পূর্ণ অধিকারসহ নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান। চীন এ বিষয়ে কাজ করছে এবং প্রত্যাবাসন যেন শুরু হয় সে লক্ষ্যে কাজ করতে একমত হয়েছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বৈরী পরিবেশ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
ড. হাছান আরও বলেন, চীন আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সুবিধাজনক সময়ে সেটি হওয়ার জন্য আলোচনা চলছে।
জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গুয়েন লুইসের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব তার চিঠিতে ও আমার সঙ্গে কাম্পালায় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনকে পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং বিশ্বনেতাদের কাছেও তার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। কিন্তু এর সঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল যে বিবৃতি দেয়, মাঝে মাঝে তা অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। এটি নিয়ে আমি তার সঙ্গে আলোচনা করেছি।
মন্ত্রী বলেন, পক্ষপাতদুষ্ট ও ভুল উৎস থেকে তারা যে সংবাদ পায়, সেটি যেন না হয়। তারা যেন ভেরিফায়েড সোর্স থেকে তথ্য পায় এবং আগুন-সন্ত্রাস চালিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা, ঘুমন্ত মানুষকে দগ্ধ করা, ২৮ অক্টোবরের ঘটনাপ্রবাহ সেগুলো যে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের রিপোর্টে আসেনি সে বিষয়টি আমি গুয়েন লুইসকে জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, বিষয়টি তিনি দেখছেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর সেদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি বেশি নিবদ্ধ হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তাও অর্ধেকে নেমে এসেছে। আমি বলেছি, রোহিঙ্গা ইস্যু যেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্পটলাইটে থাকে। জাতিসংঘের কো-অর্ডিনেটর বলেছেন, এটি নিয়ে জেনেভায় আন্তর্জাতিক ওয়ার্কিং গ্রুপ কাজ করছে এবং এ নিয়ে বৈঠক আসন্ন।
নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারীর সঙ্গে মানুষে মানুষে যোগাযোগ, যাতায়াত বৃদ্ধি, বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের উত্তরের সীমান্ত থেকে নেপাল মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে। এক লাখ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা ও সম্ভাবনার দেশ নেপালের সঙ্গে এরই মধ্যে আমাদের বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি হয়েছে। এর ট্যারিফ নিয়ে আলোচনা চলছে।
২২ দিন আগে রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫