বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজ আমরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন কিছু কাজ করছি, যার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের ফিরে আসার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত ‘রাষ্ট্র পুনর্গঠনে লেখক-শিল্পীদের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা
তিনি আরও বলেন, একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা এবং সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক সংস্কার করে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণ করা আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে নিঃসন্দেহে একটি জটিল কাজ। তবে এই কাজটি আমাদের করতে হবে। এর জন্য আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা— যেসব মানুষ ফ্যাসিবাদের পতন চায়, ফ্যাসিবাদকে সরিয়ে জনগণের উপযোগী একটি রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণ করতে চায়, তাদের একত্র হয়ে কাজ করতে হবে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আজকে কষ্ট হয়, দুঃখ হয়। মতবিনিময় সভায় আসার আগে মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা তার ভাইকে নিয়ে আমার বাসায় এসেছিল। এসে বলল, "স্যার, আজ মন খুব খারাপ।" আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেন? সে বলল, "গত কয়েক দিন ধরে যা দেখছি, তাতে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এতদিন যে কষ্ট, পরিশ্রম, ত্যাগ, প্রিয় মানুষদের চলে যাওয়া— সব কিছু ছাড়িয়ে যেন এক ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হচ্ছে।" আমার মনে হয়, এটি অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং তা করছে কথিত ফ্যাসিবাদ।
তিনি আরও বলেন, যারা ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে ছিলাম, লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি, কেন আমরা এখানে বিভাজন সৃষ্টি করছি? আজকে বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন কথা শুনলে রীতিমতো ভয় হয়। আজ আমরা পুরো আন্দোলনকে একটি ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত— তা হল, একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে একটি নির্বাচন করা এবং পার্লামেন্টে যাওয়া।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সবার উচিত অনৈক্য সৃষ্টি না করে ঐক্যের মধ্যে থেকে এই সুযোগটি কাজে লাগানো, যাতে কিছুটা হলেও সামনে এগিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ৫৩ বছর হয়ে গেছে, আমরা এখনও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারিনি। আমরা সব সময় যুদ্ধ করছি, লড়াই করছি, ভাইয়ের রক্ত ঝরাচ্ছি।
তরুণদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা অনেকে দায়িত্বে এসেছেন, এই দায়িত্বটিকে দায়িত্বশীলভাবে পালন করতে হবে। গোটা জাতিকে সামনে রেখে এটি পালন করতে হবে। আমরা এমন কিছু করব না, এমন কোনো হঠকারিতা করব না, যাতে আমরা আবার অন্ধকারে চলে যাই।
জাতীয় কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক কবি মোহন রায়হানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মনি, লেখক ও বুদ্ধিজীবী সলিমুল্লাহ খান, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান প্রমুখ।
২২ দিন আগে শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫
