দুইদিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। ইন্দোনেশিয়ার জার্কাতা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ১৭ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান রাশিয়ার এই শীর্ষ কূটনীতিক। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন তার রুশ প্রতিপক্ষকে ফুলের তোড়া হাতে স্বাগত জানিয়েছেন। সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেবেন তিনি।
মস্কোর
আগামীকাল শুক্রবার সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। এরপর গণভবণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হবেন তিনি। এদিন বিকেলেই জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়বেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এর আগে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা সফর করবেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর আসবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো। জি২০ সম্মেলনের ফাঁকে উভয় নেতা ঢাকা সফর করবেন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি যাবেন ৮ সেপ্টেম্বর। সেখানে তিনি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
নয়াদিল্লিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক ইস্যুতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার দুপুরে নয়াদিল্লির উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, দুই পক্ষ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করবে। তবে সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে বৃহত্তর সম্পর্কের পুরো ধারাটি আলোচনায় নাও আসতে পারে।
বৈঠকে কানেক্টিভিটি, তিস্তার পানি বণ্টন, জ্বালানি নিরাপত্তা এবং খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়গুলো আলোচনায় অগ্রাধিকার বিষয় হতে পারে। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দুই দেশ একসঙ্গে অনেক প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত এবং তাদের বাস্তবায়নের সমস্যা আসতে পারে।
বাংলাদেশ নির্ধারিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থের অন্যান্য ইস্যুসহ তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি উত্থাপন করবে। গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি ২০২৬ সালে শেষ হবে উল্লেখ করে রোববার মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, 'আমাদের কাছে তিস্তার পানি বণ্টনের ইস্যু আছে যা অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী উত্থাপন করবেন। আমাদের অন্যান্য সমস্যা আছে। আমাদের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে।'
এদিকে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি কোম্পানি রোসাটমের অধীনে রূপপুরে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলমান। কেন্দ্রটি পরিদর্শন করার কথা জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ। ধারণা করা হচ্ছে এর ফলে হয়তো দ্রুতই কেন্দ্রটি নির্মাণ কাজ শেষ হতে পারে।
শেখ হাসিনা এবং রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ ২০২২ সালের অক্টোবরে নির্মাণস্থলে চুল্লী স্থাপনের চূড়ান্ত পর্যায়ের সূচনা করেন। রোসাটমের সঙ্গে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি ছিল কমপক্ষে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চুক্তি। মোট পরিমাণের মধ্যে রাশিয়া প্রায় ৯০ শতাংশ অর্থায়ন করেছে বলে জানা যায়। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হওয়ায় ঋণ পরিশোধে কয়েকটি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।
ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ল্যাভরভ সম্ভবত তৃতীয় কোনো মুদ্রায় লেনদেনের বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন বলে প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে। কেননা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেক অংশীদার দেশ রাশিয়ার সঙ্গে ডলারে লেনদেন করতে পারছে না। সম্প্রতি ভারতীয় তেল আমদানিকারকা মস্কোকে চীনের ইউয়ানে মূল্য পরিশোধ করেছে।
তাই ঢাকায় ল্যাভরভের আলোচনাটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে কারণ এখানে আর্থিক ও ভূ-রাজনৈতিক বিষয়গুলো প্রাধান্য পেতে পারে। ল্যাভরভের সঙ্গে বৈঠক শেষেই দিল্লি রওনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৫ দিন আগে শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫