রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসকের ভুলে নবজাতকের মৃত্যুর পর প্রসূতি মা মাহবুবা রহমান আঁখিরও মৃত্যু হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আঁখির মৃত্যু হয়।
ল্যাবএইড হাসপাতালের কমিউনিকেশন ম্যানেজার চৌধুরী মেহের এ খোদা বলেন, দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে আঁখির মৃত্যু হয়েছে। সন্ধ্যায় তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজর মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সব প্রক্রিয়া শেষ
এদিকে এ ঘটনায় আজ রোববার এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, চিকিৎসায় অবহেলাজনিত মৃত্যু দুঃখজনক। সেন্ট্রাল হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা প্রদানের ঘাটতি রয়েছে। সেটি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া এই বিষয়টি এখন আইনের আওতায় চলে গেছে। তাই এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আইনি প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হবে।
জানা গেছে, তিন মাস ধরে সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতিবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন মাহবুবা রহমান আঁখি। এ সময় তাঁর শারীরিক অবস্থা ‘স্বাভাবিক’ ছিল বলেও চিকিৎসক জানিয়েছিলেন। অস্ত্রোপচার ছাড়াই সন্তান প্রসব সম্ভব বলে আশ্বস্ত করেছিলেন ডা. সংযুক্তা।
আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী জানান, প্রসব ব্যথা ওঠায় ৯ জুন দিবাগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তার অধীনে মাহবুবাকে ভর্তি করা হয়। ওই সময় ডা. সংযুক্তা সাহা দেশেই ছিলেন না। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর স্বজনদের জানায়, সংযুক্তা সাহা আছেন এবং ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) কাজ করছেন। অন্য চিকিৎসকের মাধ্যমে স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা ব্যর্থ হলে তখন অস্ত্রোপচার করে নবজাতক বের করা হয়। পরদিন শিশুটির মৃত্যু হয়। তখন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) সেবা না থাকায় মুমূর্ষু অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার্থে আঁখিকে পার্শ্ববর্তী ল্যাবএইড হাসপাতালে পাঠায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী আরও বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে যখন ওটিতে ঢোকানো হয় এবং নরমাল ডেলিভারির জন্য চেষ্টা শুরু করা হয়, তখনো আমি সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে আছেন কি না জানতে চাই। কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি আছেন এবং তিনি চেষ্টা চালাচ্ছেন। পরে জানতে পেরেছি ডা. সংযুক্তা সাহা ছিলেন না এবং তারা রোগীর কোনো রকম চেকআপ ছাড়াই ডেলিভারির কাজ শুরু করেন।’
ওই ঘটনায় গত বুধবার ধানমন্ডি থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ পাঁচ-ছয়জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’র অভিযোগ এনে একটি মামলা করা হয়। যাঁদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা হলেন ডা. মিলি, ডা. এহসান, অধ্যাপক সংযুক্তা সাহার সহকারী জমির এবং হাসপাতালের ব্যবস্থাপক পারভেজ।
মামলায় গ্রেপ্তার দুই চিকিৎসক ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহা এরই মধ্যে দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার তাঁদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। তাঁরা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারহা দিবা ছন্দা আসামি মুনার এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আফনান সুমি আসামি শাহজাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
এদিকে চিকিৎসকের অবহেলায় আঁখির মৃত্যুর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি পরিদর্শন দল গত শুক্রবার ওই হাসপাতাল পরিদর্শন করে। পরিদর্শনে আইসিইউতে রোগী রাখার উপযুক্ত পরিবেশ না থাকাসহ বিভিন্ন অসংগতির কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষ বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
৬ দিন আগে শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫