আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছে কুমিল্লা-১১(চৌদ্দগ্রাম) নির্বাচনী আসনের রাজনৈতিক দলগুলো। চলতি বছর ডিসেম্বর বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সেই লক্ষ্যে চৌদ্দগ্রামে এবার এমপি প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়ন প্রত্যাশী পুরাতন নেতাদের পাশাপাশি নতুন নেতৃত্বের নেতারাও আছেন অনেকে।
একটি পৌরসভা
এদিকে জামায়াত তথা বিএনপি জোটের প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. কামরুল হুদা, ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মহিউদ্দিন ভূঁইয়া মাসুম, উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি (এরশাদ) আলহাজ মো. খায়েজ আহমেদ ভূঁইয়া, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ আলমগীর কবির মজুমদার (এরশাদ), বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি কাজী জহিরুল কাউয়ুমের নাতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদের ভাতিজা কাজী মো. নাহিদ।
মনোনয়ন পাওয়ার জন্য এই প্রার্থীরা বর্তমানে নির্বাচনী এলাাকার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সভা-সেমিনার করে বেড়াচ্ছে। রাজনৈতিক আড্ডায় ও চায়ের দোকানে শোনা যাচ্ছে এই প্রার্থীদের নাম। এই সম্ভাব্য প্রার্থীরা যে যখন সুযোগ পাচ্ছেন উপজেলায় আসছেন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় আ’লীগ সূত্র জানায়, আ’লীগের একাধিক প্রার্থী থাকলেও এমপি মুজিব ছাড়া মনোনয়ন লড়াইয়ে বেশ আলোচনায় রয়েছেন তিনবারের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুস ছোবহান ভূঁইয়া হাসান। তিনি প্রকাশ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা না বললেও তাঁর নেতাকর্মীরা চান, রাজনীতির মাঠের সিনিয়র ও সক্রিয় এই নেতা নৌকার মাঝি হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। দল যদি নির্বাচন করতে ইচ্ছুক হয় তাহলে আমরা প্রস্তুত আছি। গত ১৫ বছর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকায় চৌদ্দগ্রামে বিএনপির ১০ হাজার নেতাকর্মীর নামে শতাধিক মামলা হয়েছে। মামলা-হামলার পরও জামায়াত মাঠে অত্যন্ত শক্ত অবস্থানে রয়েছে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যদি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে চৌদ্দগ্রামে ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করবেন বলে আশাবাদী স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ।
অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ রহমতুল্লাহ বাবুল বলেন, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠন করার জন্য আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। মো. মুজিবুল হক এমপির নির্দেশে উপজেলা সদর থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে সমাবেশ প্রায় শেষের দিকে রয়েছে। যারা নির্বাচনী পরিবেশকে অশান্ত করার পাঁয়তারা করছে, তারা চৌদ্দগ্রামের নন, তারা ঢাকার নেতা।
দু’বারের সাবেক পৌর মেয়র মো. মিজানুর রহমান বলেন, চৌদ্দগ্রামের মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। আ’লীগ দলীয় নেতাকর্মীদের কন্ঠরোধ করতে তাদের মামলায় জড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। দলীয় গ্রুপিংয়ের কারণে এ অবস্থা। চৌদ্দগ্রামের রাজনীতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। চৌদ্দগ্রামের রাজনীতির পরিবেশ সুষ্ঠু-সুন্দর করার লক্ষ্যে এবং আধুনিক উন্নয়নমুখি চৌদ্দগ্রাম গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমি কাজ করবো। আমি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি। জনগণের চাওয়া-পাওয়া, কথার মূল্যায়ণ যদি হয়, তাহলে আমি নৌকার মনোনয়ন পাবো ইনশাল্লাহ। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মাঠ জরিপ করছে। আশা করি মাঠের প্রকৃত অবস্থা নীতিনির্ধারকরা জানেন। সর্বোপরি আমাদের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রীর শেষ সিদ্ধান্তই আমরা মেনে চলবো।
চৌদ্দগ্রামের রাজনীতি নিয়ে জানতে সাংসদ মুজিবুল হক মুজিবের মুঠোফোনে কল দিলে মুঠোফোন সংযোগে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য যে, ১৯৯৬ সালে এই আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে নৌকা মার্কায় ভোটে জয়লাভ করে সংসদ সদস্য হন বর্তমান এমপি মো. মুজিবুল হক। পরবর্তী সময়ে ২০০১ সালে সংসদ নির্বাচনে তিনি হেরে যান। এই আসনে জয়লাভ করেন জামায়াতের সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতের দুর্গখ্যাত চৌদ্দগ্রামের আসনটিতে নৌকা বিজয়ী হয়। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়নি জামায়াতে ইসলামী। জামায়াত টানা ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে এখানে আওয়ামীলীগের ভিত্তি এখানে মজবুত ।
৬ দিন আগে শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫