Daily Bangladesh Mirror

ঢাকা, রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

জাতীয়

বাস ঘিরে বছরে হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি ও ঘুষ বাণিজ্য হয় : টিআইবি

ডেস্ক রিপোর্ট:
১৫ দিন আগে রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫
# ফাইল ফটো

বাসের সনদ ইস্যু ও নবায়নের বাসপ্রতি গড়ে ১৭ হাজার ৬১৯ টাকা ঘুষ দিতে হয়। এ খাত থেকে বছরে ১ হাজার ৫৯ কোটি টাকার ঘুষ ও চাঁদাবাজি হয়। ৫টি খাতে এ ঘুষ ও চাঁদাবাজির মধ্যে সর্বোচ্চ বিআরটিএ বাসের নিবন্ধন সনদ ও হালনাগাদে সর্বোচ্চ ৯০০ কোটি ৫৯ লাখ ঘুষ লেনদেন হয়।


মঙ্গলবার (৫ মার্চ) রাজধানীতে ধানমন্ডি মাইডাস সেন্টারে মালিকানাধীন বাস পরিবহন ব্যবস্থায় শুদ্ধাচার শীর্ষক

এক গবেষণায় এসব তথ্য তুলে ধরে টিআইবি।


গবেষণা পরিচালনা করেন মুহা. নুরুজ্জামান ফরহাদ, ফারহানা রহমান ও মোহাম্মদ নূরে আলম। অনুষ্ঠানে সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।


গবেষণায় দেখা গেছে, ৫টি খাতের মধ্যে বিআরটিএ বাসের নিবন্ধন সনদ ও হালনাগাদে সর্বোচ্চ ৯০০ কোটি ৫৯ লাখ ঘুষ লেনদেন হয়। এরপর ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশকে মামলা এড়াতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৭ কোটি ৫৭ লাখ ঘুষ লেনদেন হয়। এরপর দলীয় পরিচয়ে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কর্তৃক সড়কে বছরে চাঁদাবাজি হয় ২৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, সড়কে পার্কিংয়ের জন্য পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক কর্মীর নামে ৩৩ কোটি ৪৮ লাখ, টার্মিনালে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য মালিক ও শ্রমিক সংগঠন কর্তৃক অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের পরিমাণ  ১২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা অবৈধভাবে আদায় করা এই গবেষণায় সিটি বাস সার্ভিস বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।


পরিবহন খাত আপাদমস্তক দুর্নীতিতে জর্জরিত মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই খাতে মালিক শ্রমিকদের আঁতাতে তারা বেশি ক্ষমতাবান দেখা যায়। সরকার এখানে তাদের থেকে ক্ষমতাহীন।


তিনি আরও বলেন, মালিক শ্রমিক সংগঠনগুলো ৮০ শতাংশ সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণে, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাবের কারণে পুরো খাতটি জিম্মি হয়ে রয়েছে। এতে করে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে যাত্রীরা। তারা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।বিআরটিএ সার্বিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে এ কথা পরিষ্কারভাবেই বলা যায়। তারা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।


টিআইবির রিসার্চ ফেলো মোহাম্মদ নূরে আলম বলেন, সড়কে চলাচলকারী বাসের ৬০.২ শতাংশ ব্যক্তিমালিকানাধীন । বিআরটিএ এর ২০২৩ সালের রিপোর্ট অনুসারে ৯৮.৪ শতাংশ যাত্রী বেসরকারি পরিবহনে যাতায়াত করেন। মোট ব্যক্তিমালিকানাধীন বাসের সংখ্যা ৮০ হাজার ৫২১টি।


তিনি বলেন, গবেষণার উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিবহন ব্যবসার শুদ্ধাচার পর্যালোচনা করা। গবেষণা শুরু হয় ২০২৩ সালের মে মাসে চলমান থাকে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত। ২০২৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত জরিপ পরিচালনা করা হয়। ৫১টি বাস টার্মিনাল পর্যবেক্ষণ করা হয়।


তিনি বলেন, ১৮.৯ শতাংশ  বাসের নিবন্ধন নেই, ২৪ শতাংশ ফিটনেস নেই, ১৮.৫ ট্যাক্স টোকেন নেই, ২২ শতাংশ রুট পারমিট নেই বলে জানিয়েছে শ্রমিকরা। ৮২ শতাংশ শ্রমিককে কোনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি। দৈনিক গড়ে ১১ ঘণ্টা কাজ করতে হয়, সর্বোচ্চ ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করেন, তাদের কোনো ওভারটাইম ভাতা দেওয়া হয় না।


গবেষণায় দেখানো হয়, ৪০.৯ শতাংশ বাসকর্মী ও শ্রমিকদের মতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির এক বা একাধিক বাসের নিবন্ধনসহ কোনো না কোনো সনদের ঘাটতি আছে।


গবেষণায় আরও বলা হয়, ২২.২ শতাংশ কর্মী/শ্রমিকদের মতে, মদ্যপান বা নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করে চালক গাড়ি চালান এবং কন্ডাক্টর/হেলপার/সুপারভাইজার বাসে দায়িত্ব পালন করেন। সিটি সার্ভিসের ক্ষেত্রে এ হার ৪৫.৯ এবং আন্তঃজেলার ক্ষেত্রে ১৯.২ শতাংশ বলে জানায় সংস্থাটি।


নির্দেশনার যথাযথ প্রয়োগের অভাবে চলন্ত বাসে চালকরা ফোন ব্যবহার করেন। এর ফলে অনেকসময় প্রাণহানিসহ দুর্ঘটনা ঘটে বলেও জানানো হয়।


তবে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের সঙ্গে বিআরটিএ এর প্রকাশিত তথ্যের গড়মিল হয় বলে দাবি করছে টিআইবি।


বিআরটিএ’র তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৫ হাজার ২৪ জন এবং যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যানুযায়ী এ সংখ্যা ৭ হাজার ৯০২ জন।


এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ডিরেক্টর মোহাম্মদ বদিউজ্জামান, উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) সুমাইয়া খায়ের উপস্থিত ছিলেন।

১৫ দিন আগে রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫

ইউটিউব সাবস্ক্রাইব করুন