১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসকে সামনে রেখে ঢাকায় ১৪টি দেশ ও ইইউ একটি বিবৃতি দিয়েছে। যেই ১৪টি দেশ এই বিবৃতি দিয়েছে তারা সবাই কোয়াডভুক্ত দেশ। কোয়াডভুক্ত এই দেশগুলো বিবৃতিতে বলেছে যে, অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ, সমতা, নিরাপত্তা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক মানবিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অনুসরণীয় মূল্যবোধ ও নীতি হিসেবে আমরা গণতান্ত্রিক শাসনকে সমর্থন ও উৎসাহিত করি। আমরা বাংলাদেশের
বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে এদেশের সাফল্যকে আরও উৎসাহিত করতে আগ্রহী এবং মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করছি। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আগামী ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আমরা মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়ন উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের মৌলিক ভূমিকাকে তুলে ধরতে চাই। আমরা মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রে সংরক্ষিত স্বাধীনতা উদযাপন করি এবং ঘোষণাপত্রে বর্ণিত বিভিন্ন অঙ্গীকারের মধ্যে স্বাধীন মতপ্রকাশ, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও নির্বাচন বিষয়ে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রের অঙ্গীকার রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরি।এই বিবৃতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়া যেই ১৪টি দেশ স্বাক্ষর করেছে তাদের মধ্যে রয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, জাপান, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি দেশ এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেনি। যে তিনটি দেশ এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেনি তাদের মধ্যে রয়েছে- ভারত, চীন এবং রাশিয়া। এই তিনটি দেশই মনে করছে যে, বাংলাদেশের নির্বাচন এই দেশের সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং এই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। কোয়াডভুক্ত দেশগুলোর পক্ষ থেকে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিলো, ভারত যেন এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করে এমন একটি অনানুষ্ঠানিক প্রস্তাবও তাদের দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্রনীতির মূল উপজীব্য বিষয় হলো, অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা। কাজেই, বাংলাদেশের নির্বাচন কিভাবে হবে সেটি বাংলাদেশের সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের বিষয়। এই ব্যাপারে ভারত আগ্রহী নয় এবং হস্তক্ষেপ করতে রাজি নয় মর্মে জানিয়ে দিয়েছে। যে কারণে ভারত এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেনি।
অন্যদিকে কোয়াডের তীব্র বিরোধী চীন বাংলাদেশের অন্যতম অর্থনৈতিক অংশীদার। চীন স্বাভাবিকভাবেই এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেনি। আর ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধরত রাশিয়া বাংলাদেশের অনেক বড় কৌশলগত অংশীদার এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পরীক্ষিত বন্ধু। সে কারণেই রাশিয়াও এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর প্রদান করেনি। তাদের এই স্বাক্ষর প্রদান না করার প্রেক্ষিতেই বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কূটনৈতিক মহল বিভক্ত হয়ে পড়লো। এর ফলে বাংলাদেশের ওপর একক রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি সম্ভব নয় বলেই বিভিন্ন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তারা বলছেন যে, এর আগে এক-এগারোর সময় কূটনীতিকদের যে ঐক্য হয়েছিল সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলো। তাছাড়া ভারতকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ব্যাপারে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সমঝোতা করা কূটনীতিকদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ কারণেই এই পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে কোয়াডভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশের ওপর যে চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে, সেই চাপ কতটা গ্রহণযোগ্য হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
১২ দিন আগে শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫