Daily Bangladesh Mirror

ঢাকা, রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

রাজনীতি

আওয়ামী লীগ–বিএনপি আলোচনায় না বসলে সংকট বাড়বে: অধ্যাপক এম এম আকাশ

ডেস্ক রিপোর্ট:
১০ দিন আগে রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫
# ফাইল ফটো

অধ্যাপক এম এম আকাশ। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। অধ্যাপনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। চেয়ারম্যান, ব্যুরো অব ইকোনমিকস রিসার্চ। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। রাজনীতি, আসন্ন নির্বাচন, বিদেশি তৎপরতার প্রসঙ্গ নিয়ে মুখোমুখি হন। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথমটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

এম এম আকাশ: দুটি প্রশ্নের মীমাংসা ছাড়া এ

সংকটের সমাধান আসবে না। একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাড়া মানুষ এখন বিশ্বাস করতে পারছে না যে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না! এ কারণে মানুষের মধ্যে আকাঙ্ক্ষা আছে যে দল নিরপেক্ষ একটি সরকার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ভোট হোক।

কিন্তু আওয়ামী লীগ মনে করে তাকে দল নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হলে সংবিধান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আওয়ামী লীগ সংবিধান থেকে কিছুতেই বের হবে না। কিন্তু বিএনপি এটি ধরে বসে আছে যে, নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে। যদিও তারা আরেকটু বেশি বলছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে আগে পদত্যাগ করতে হবে। তারা এর আগে আলোচনায়ই যেতে চাইছে না।

বিদেশিরা গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের পর বলছে, আলোচনা নিঃশর্তভাবে হতে হবে। আমার কাছে মনে হয়েছে গত ২৮ তারিখের পর আওয়ামী লীগ একটু গেইন (অর্জন) করেছে এবং বিএনপি একটু লুজ (ক্ষতি) করেছে। আওয়ামী লীগ–বিএনপি আলোচনায় না বসলে সংকট বাড়বে।

তবে বিদেশিরা গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের পর বলছে, আলোচনা নিঃশর্তভাবে হতে হবে। আমার কাছে মনে হয়েছে গত ২৮ তারিখের পর আওয়ামী লীগ একটু গেইন (অর্জন) করেছে এবং বিএনপি একটু লুজ (ক্ষতি) করেছে। আওয়ামী লীগ–বিএনপি আলোচনায় না বসলে সংকট বাড়বে।

এম এম আকাশ: ২০০৬ সালে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা হওয়ার কথা ছিল। বিএনপি কৌশল নিয়ে বিচারপতিদের চাকরির বয়স বাড়িয়ে দিলো পছন্দের ব্যক্তিকে বসানোর জন্য। আওয়ামী লীগ তার প্রতিবাদ করলো। গঠন হলো না। সামরিক ব্যবস্থা জারি হলো।

আওয়ামী লীগ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বলছে। ভারত, চীন, রাশিয়ার ব্যাপারে তাদের ভয়েস কম। বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রকে পছন্দ করে বলছে। আর ভারতকে বলছে আপনি নিরপেক্ষ থাকুন। তার মানে উভয় পক্ষই বিদেশিদের ওপর নির্ভর করে রাজনীতি করছে, আলোচনা করছে।

সুতরাং, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা হলেই যে দল নিরপেক্ষ হতে হয় তা নয়। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার অকার্যকারিতার কারণেই এখন স্লোগান হয়ে গেছে দল নিরপেক্ষ সরকার।

এম এম আকাশ: কেউ হয়তো দল নিরপেক্ষ নয়। মানি, মাসুল আর ম্যানিপুলেশন থাকলে কেউ নিরপেক্ষ থাকতে পারে না। সমস্যা হয়ে গেছে আওয়ামী লীগ পরপর দুটি নির্বাচনে মানি, মাসুল ও ম্যানিপুলেশন ব্যবহার করার কারণে তাদের আমলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে কেউ বিশ্বাস করে না। সাধারণ মানুষও বিশ্বাস করে না, বিদেশিরা বিশ্বাস করে না। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তো করেই না।

এ কারণে আওয়ামী লীগকেই কনভিন্স করেতে হবে যে, তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে। কিন্তু এটি করার জন্যও তো আলোচনায় বসা দরকার।

এম এম আকাশ: সমানুপাতিক পদ্ধতি। সর্বদলীয় প্রচারণার আয়োজন থাকবে। গণমাধ্যমেও। প্রতীক থাকবে। ভোটকেন্দ্রে কোনো ব্যক্তির জন্য ভোট হবে না। প্রতীক, নীতি আর ইশতেহার থাকবে। ব্যক্তির প্রচারণা থাকবে না। তাহলে মানি, মাসুলের ব্যবহার হবে না। জালিয়াতিও করতে পারবে না।

এটি হলে আওয়ামী লীগ-বিএনপির ১০০টি করে আসন সুরক্ষিত থাকবেই। আর অন্যদলগুলোও কিছু না কিছু পাবে। প্রাপ্ত ভোট অনুপাতে সরকার গঠন হবে। তখন আর গণ্ডগোল থাকবে না।

এম এম আকাশ: সেই পরিবেশ নেই। আমি দীর্ঘমেয়াদে চূড়ান্ত সমাধানের কথা বলছি। আশার কথা বলছি। দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভাও হতে পারে। কিন্তু এজন্য তো নিঃশর্ত আলোচনার দরকার। আলোচনার মানসকিতা না থাকলে কিছুই হবে না।

আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচন করেও তাহলে বিএনপি চাইবে ভোটার সংখ্যা যেন খুব কম হয়। বিএনপি প্রথমত চাইবে ভোট যাতে না হয়। দ্বিতীয়ত, চাইবে ভোট হলেও যেন ভোটার সংখ্যা একেবারেই কম হয়। হরতাল-অবরোধ চলছেই। ভোটের হার যদি ১০ শতাংশে আনতে পারে তাহলে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও তো ভোট দিতে এলো না এবং প্রমাণিত হবে। সরকারকে বিতর্কিত করাই হচ্ছে এখন বিএনপির সফলতা। প্রধানমন্ত্রীর পদ একটি, জোট দুটি। এর কোনো সহজ সমাধান নেই।

ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন ক্ষমতা হারালে তার প্রাণে বাঁচার সংশয় রয়েছে। আর বিএনপি মনে করছে এবার ক্ষমতায় না এলে দল রক্ষা হবে না। একজনের জীবন বাঁচানোর প্রশ্ন, অন্যদিকে দলের অস্তিত্বের প্রশ্ন। অনেকেই মনে করেন আওয়ামী লীগ এতদিন যে অপকর্ম করেছে, এবার তার ফয়সালা হবে। সুতরাং, তারা তো ভয়েই থাকবে।

তবে উভয় দলের কিছু আনুগত্যের জায়গা আছে। উভয় দল সবচেয়ে ধনীদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়েই চলে। এই ধনীদের কাছে আটকা। আর উভয় দলকেই বিদেশিদের কাছ থেকে অনুমোদন লাগবে। বিশেষ করে ভারত, রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার হিসাব থেকেই ক্ষমতায় টিকে থাকা। এই চার পক্ষের মধ্যে তিনটি যে দলের দিকে থাকবে তারাই ক্ষমতায় টিকে থাকবে।

এম এম আকাশ: একদম। দুটি কারণে এমন ঘটছে। প্রথমত আমাদের জাতীয় ঐক্য নেই। এ কারণে যে দলই ক্ষমতায় আসুক তাকে বিদেশিদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

এম এম আকাশ: এটি তো রাজনীতি। আওয়ামী লীগ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বলছে। ভারত, চীন, রাশিয়ার ব্যাপারে তাদের ভয়েস কম। বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রকে পছন্দ করে বলছে। আর ভারতকে বলছে আপনি নিরপেক্ষ থাকুন। তার মানে উভয় পক্ষই বিদেশিদের ওপর নির্ভর করে রাজনীতি করছে, আলোচনা করছে।

১০ দিন আগে রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫

ইউটিউব সাবস্ক্রাইব করুন