Daily Bangladesh Mirror

ঢাকা, শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

সারাদেশ

৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে খুনি ভাড়া করে স্বামীকে হত্যা

ডেস্ক রিপোর্টঃ
২৭ দিন আগে শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫
# ফাইল ফটো

দাম্পত্য কলহ ও সম্পত্তির লোভে স্বামী মো. এমদাদুল হককে (৪৮) হত্যার পরিকল্পনা করেন স্ত্রী নারগিস মোস্তারী (৪০)। সে জন্য একজনকে ৫০ হাজার টাকায় ভাড়াও করেন। কাজ শেষে আইয়ুব আলী ওরফে প্রকাশ আলী (২২) খুনিকে মাত্র ৫০০ টাকা ধরিয়ে দেন পরিকল্পনাকারী স্ত্রী। ইতোমধ্যে নিহতের স্ত্রী ও খুনিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট

জিহান সানজিদার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিলে বেরিয়ে আসে এ তথ্য।

জানা যায়, মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টায় সেমাইয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীকে অচেতন করেন স্ত্রী। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে খুনি ভাড়া করেন। পরে স্থানীয় আইয়ুব আলীর সহায়তায় স্বামীর হাতে জিআই তার পেঁচিয়ে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে স্বামীর মৃত্যু নিশ্চিত করেন স্ত্রী। এর আগে, ভাইকে হত্যার অভিযোগ এনে বুধবার (২২ মার্চ) রাতে দুইজনকে আসামি করে মীরসরাই থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-১৩) করেন নিহতের ছোট ভাই কামাল পাশা।

নারগিস উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ওয়াহেদপুর গ্রামের ফরাজী বাড়ির এমদাদুল হকের স্ত্রী ও উপজেলার ১৬নং সাহেরখালী ইউনিয়নের ভোরের বাজার গ্রামের আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে। আইয়ুব আলী ওরফে প্রকাশ আলী (২২) নোয়াখালী জেলার চরজব্বর থানার চরভাটা গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে। তিনি বর্তমানে মীরসরাইয়ের সাহেরখালী ইউনিয়নের ভোরের বাজার গ্রামের আলী চৌধুরী বাড়িতে ভাড়া থাকেন।

নিজের জবানবন্দিতে নারগিস জানান, এক বছর আগে আরব আমিরাত থেকে স্বামী এমদাদুল হক দেশে আসেন। পারিবারিক জীবনে তাদের নাহিয়ান (১৯) ও নামিয়ান (৮) নামে দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। স্বামীর সঙ্গে তার প্রায় ঝগড়া হতো। এক পর্যায়ে দাম্পত্য কলহ এবং সম্পত্তির লোভে স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। হত্যাকাণ্ডে সহায়তার জন্য আইয়ুবকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ঠিক করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২১ মার্চ বিকেল সাড়ে ৫টায় সেমাইয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীকে অচেতন করেন। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আইয়ুব আলীর সহায়তায় স্বামীর হাতে জিআই তার পেঁচিয়ে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে রাত ১০টায় আইয়ুব আলী নিজ বাড়ি সাহেরখালী চলে যান। পরে রাত ২টায় দেবর কামাল পাশাকে ফোন দিয়ে বলেন, তার ভাই বৈদ্যুতিক শক খেয়েছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মীরসরাই থানার এসআই মো. মাঈন উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, এমদাদুল হকের মৃত্যুর খবর শুনে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে এমদাদুলের লাশ। বাঁ হাতে পোড়ার চিহ্ন এবং নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল, পিঠেও কালচে দাগ ছিল। স্ত্রীর কথায় সন্দেহ হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করলে পরে তিনি স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।

হত্যাকাণ্ডে আইয়ুব আলী নামে আরও একজন জড়িত থাকার কথাও স্বীকার করেন। তার দেয়া ঠিকানা মতে বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) ভোরে উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের ভোরবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আইয়ুব আলী পেশায় দিনমজুর। হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করলে তাকে ৫০ হাজার টাকা দেয়ার কথা বলেন নারগিস।

তিনি আরও বলেন, কথামত স্বামী এমদাদুলকে হত্যার পর নগদ ৫০০ টাকা আইয়ুব আলীকে দেন নারগিস। বাকি টাকা স্বামীর সম্পত্তি বিক্রি করে পরিশোধ করার কথা ছিল। বাবার বাড়িতে ঘরের কাজ করানোর সময় আইয়ুব আলীর সঙ্গে পরিচয় হয় নারগিসের। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত জিআই তার, মাল্টিপ্ল্যাগ, প্লাস ও আইয়ুব আলীর কাছে থাকা ৫০০ টাকা জব্দ করা হয়েছে। তারা এসব স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন।

মামলার বাদী কামাল পাশা বলেন, সম্পত্তির লোভে ভাবি আমার ভাইকে হত্যা করেছেন। অচেতন করে ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ভাইয়া এক বছর আগে আমিরাত থেকে বাড়িতে আসেন। ভাবি সবসময় বাবার বাড়িতে থাকতে চাইতো এবং ওনার বাবার বাড়ি এলাকায় ভাইয়াকে বাড়ি করতে বলত। ভাইয়া রাজি না থাকায় প্রায় সময় তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। সে জন্য ভাইয়াকে এভাবে মেরে ফেলবে কখনও চিন্তাও করতে পারিনি। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

মীরসরাই থানার ওসি কবির হোসেন বলেন, দাম্পত্য কলহ ও সম্পত্তির লোভে স্বামী এমদাদুল হককে হত্যার পরিকল্পনা করেন স্ত্রী। হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করেন আইয়ুব আলী নামে আরেকজন। তারা দুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

২৭ দিন আগে শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫

ইউটিউব সাবস্ক্রাইব করুন