বাস্তব যুদ্ধের সময় তাইওয়ানকে কীভাবে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হবে তার মহড়া চালাচ্ছে চীন। সোমবার তৃতীয় দিনের মতো এই মহড়া হয়েছে। এদিন সমুদ্রে থাকা চীনা এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার দিয়ে ঝাকে ঝাকে চীনা যুদ্ধবিমান তাইওয়ানের দিকে ছুটে যায়। সমুদ্রের পাশাপাশি আকাশেও তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার বিষয়টি ঝালিয়ে নিচ্ছে চীন।
খবরে জানানো হয়, শনিবার থেকে তাইওয়ানের আশেপাশে যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজের
সমাবেশ ঘটিয়েছে বেইজিং। চীনের কঠোর হুশিয়ারি উপেক্ষা করে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন। এর জবাবে শনিবার থেকে এই সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। তিন দিনের এই মহড়ার নাম দেয়া হয়েছে ‘জয়েন্ট সোর্ড’। চীনা পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড বিবৃতিতে জানায়, তাইওয়ান প্রণালিতে ৮ থেকে ১০ এপ্রিল ‘যুদ্ধ প্রস্তুতির টহল’ বা মহড়া চলবে।তাইওয়ান জানিয়েছে, তারা পূর্ব দিক থেকে চীনা যুদ্ধবিমান প্রবেশ করতে দেখেছে। অপরদিকে চীন জানিয়েছে, তার শ্যানডং বিমানবাহী রণতরী এই মহড়ায় যোগ দিয়েছে।
যদিও গত বছরের আগস্ট মাসে ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের সময় চীন যে মহড়া চালিয়েছিল, এবারের মহড়া তার তুলনায় বেশ ছোট। তবে তারপরেও অন্তত ৭০টি যুদ্ধবিমান এবং ১১টি জাহাজ দিয়ে তাইওয়ানকে টানা তৃতীয় দিনের মতো ঘিরে রেখেছে চীন।
এবারের মহড়ায় চীন প্রথম বারের মতো তাইওয়ানের পূর্ব অংশ দিয়ে আক্রমণের কৌশল সাজিয়েছে। এর আগে কখনও এমনটি দেখা যায় নি। চীনের মূল ভূখণ্ড তাইওয়ানের পশ্চিম দিকে। তাই সেদিক থেকেই আক্রমণ করা সহজ চীনের জন্য। তবে এবার বিমানবাহী রণতরী থেকে আক্রমণের কৌশল অনুশীলন করেছে দেশটি। এই অনুশীলনে যোগ দেয় চীনের জে-১৫ যুদ্ধবিমান। বিমানবাহী রণতরী শ্যানডং তাইওয়ান থেকে ৩২০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। সেখান থেকে বিমান উড়ে এসে তাইওয়ানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ টার্গেটে হামলার বাস্তব অনুশীলন সম্পন্ন করেছে।
জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সোমবার জানিয়েছে, এর আগের দুই দিনেও শ্যানডং থেকে যুদ্ধবিমান মহড়ায় যোগ দিয়েছে। রোববার পর্যন্ত এই বিমানবাহী রণতরীতে ১২০ বারেরও বেশি যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ওঠানামা করেছে। এদিকে চীনের মহড়ার মধ্যেই দক্ষিণ চীন সাগরে প্রবেশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস মিলিয়াস। এটি তাইওয়ান থেকে ১৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে। চীনের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই রণতরী অবৈধভাবে তাদের জলসীমায় প্রবেশ করেছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের তরফে জানানো হয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমার মধ্যেই রয়েছে।
উল্লেখ্য, তাইওয়ান নিজেকে স্বাধীন দেশ মনে করে। যদিও চীন কখনোই এই দ্বীপের ওপরে তার দাবি প্রত্যাহার করেনি। ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করলে চীনের এই দ্বীপটি আলাদা হয়ে যায়। তবে চীন এখনও দ্বীপটিকে নিজের অংশ হিসেবেই দাবি করে। বিশ্বের কোনো দেশকে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে হলে তার ‘এক-চীন নীতি’ মেনে নিতে হয়। সেই নীতি অনুসরণ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্র পশ্চিমা দেশগুলো তাইওয়ানকে চীনের অংশ হিসেবে মেনে নিয়েছে। তবে দ্বীপটির স্বাধীনতাকামী নেতাদের সঙ্গে পশ্চিমাদের ঘনিষ্টতা রয়েছে। এটিকে ভাল চোখে নেয় না চীন।
১০ দিন আগে রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫