প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের ছেলের বিয়ের বউভাত অনুষ্ঠান। এ উপলক্ষে রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মচারী ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের ওই অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া হয়। তাই পাঠদান বন্ধ রেখে বিয়ের দাওয়াত খেতে যান তিন উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারী।
বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রেখেই রোববার (৮ জানুয়ারি)
জানা গেছে, প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের বাড়ি কুড়িগ্রামের রৌমারীতে। তিনি কুড়িগ্রাম-৪ আসনের (রৌমারী, রাজীবপুর ও চিলমারী) সরকারদলীয় সংসদ সদস্য। রোববার প্রতিমন্ত্রীর রৌমারীস্থ বাসভবনে তার ছেলে সাফায়েত বিন জাকিরের বিবাহোত্তর বউভাত অনুষ্ঠান হয়।
রোববার সকালে চিলমারী ও রৌমারী উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগই খোলা হয়নি। কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা তোলা হলেও কোনো শিক্ষক-কর্মচারী কিংবা শিক্ষার্থী নেই। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই চিত্র দেখা গেছে।
উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষককে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকরা দাওয়াতে অংশ নিতে যাবেন। এজন্য পাঠদান বন্ধ।
আরেক শিক্ষক বলেন, আমাদেরকে বলা হয়েছে একটা ক্লাস নিয়ে দাওয়াতে যেতে। তবে কোনো ক্লাস নেওয়া হয়নি। বিয়ের উপহার কেনার জন্য সবার কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে চাওয়া হয়েছিল। পরে ৩০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে চিলমারী উপজেলার মজাইডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ রাধাবল্লভ, রাণীগঞ্জ বাজার, ফকিরেরহাট, খালেদা শওকত পাটওয়ারী, চর খরখরিয়া, নিরিশিং ভাজ, রানীগঞ্জ মদন মোহন, খরখরিয়া ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে কথা হলে বলেন, শৈত্যপ্রবাহের কারণে, সংরক্ষিত ছুটি, প্রতিমন্ত্রী ছেলের বিয়ের দাওয়াতের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।
ফকিরেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিপুল, আমির হোসেনসহ বেশ কিছু বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের ছেলের বিয়ের জন্য বন্ধ দেওয়া হয়েছে।
মদন মোহন এলাকার দিলিপ কুমার ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘শিক্ষক খুঁজতে আইছেন, তাহলে রৌমারী যান’।
চিলমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু সালেহ্ সরকার বলেন, আমি রৌমারীতে আছি। পরে কথা বলব।
রৌমারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. নজরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল দিলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। আর সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. নাজমুল করিমের নম্বরে ফোন দিলে তিনি নিজেও ওই অনুষ্ঠানে রয়েছেন বলে জানান। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আইবুল ইসলামকে একাধিক বার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিইও) মো. শহীদুল ইসলাম বলছেন ভিন্ন কথা। তার দাবি, ‘সকল প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকরা আজ সংরক্ষিত ছুটি দিয়েছেন। প্রচণ্ড শীতের ভয়াবহতার কারণে প্রধান শিক্ষকদের হাতে যে সংরক্ষিত ছুটি আছে, সেই ছুটি তারা দিয়েছেন। সব প্রতিষ্ঠানে একযোগে সংরক্ষিত ছুটি দেওয়ার প্রশ্নে ডিপিইও বলেন, ‘তারা (প্রধান শিক্ষকরা) জানিয়েছেন, প্রচণ্ড শীতে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে, অনেকে স্কুলে আসছে না। এজন্য একদিন ছুটি দেওয়া হয়েছে। এই ছুটি দেওয়ার ক্ষমতা প্রধান শিক্ষকদের হাতে থাকে। প্রতিমন্ত্রীর ছেলে বিয়ের দাওয়াতে শিক্ষকদের অংশ নেওয়া বিষয়ে ডিপিইও বলেন, ‘দাওয়াতে যে কেউ যেতেই পারেন।
১২ দিন আগে রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫