পাঁচ দিন এভারকেয়ার হাসপাতালে থাকার পর গতকাল প্রায় জোর করেই বাড়িতে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বাড়িতে ফেরার জন্য তাকে রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়েছে এবং এই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত তিনি জয়ী হয়েছেন। চিকিৎসকরা তার জেদের কাছে নতি স্বীকার করেছেন। এখন তারা বলছেন বাইরে থেকেই বেগম জিয়া চিকিৎসা করবেন। এরপর বাড়িতে এসেই বেগম জিয়াকে তৎপর দেখা যাচ্ছে। ফিরে এসেই তিনি তার ভাই শামীম
ইস্কান্দারকে বলেছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যদের নাম এবং টেলিফোন নাম্বার দ্রুত এনে দিতে। পাশাপাশি তিনি বিএনপির যে সমস্ত নেতারা বিভিন্ন কারণে জেলে আছে তাদের তালিকাও তৈরি করতে বলেছেন। বেগম খালেদা জিয়া তার সাবেক একান্ত সচিব শিমুল বিশ্বাসকে আবার নতুন করে নিয়োগ দেয়ার কথা ভাবছেন। এই মুহুর্তে বেগম জিয়ার কোনো রাজনৈতিক একান্ত ব্যক্তিগত সচিব নেই।বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতার হবার পরপরই শিমুল বিশ্বাস চাকরী হারান এবং পরবর্তিতে তিনি কারান্তরীণ হন। শিমুল বিশ্বাস যদি ফিরোজায় নিয়মিত যাওয়া-আসা শুরু করেন তাহলে বেগম জিয়ার রাজনৈতিক অধ্যায় সূচনা হবে বলে বিভিন্ন সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দুই-একদিনের মধ্যেই শিমুল বিশ্বাস আবারও বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে কাজে যোগদান করতে পারেন এবং বেগম খালেদা জিয়ার বিভিন্ন চাওয়া-পাওয়া গুলো দেখতে পারেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বেগম খালেদা জিয়া এইবার নির্বাচন না করার কোনো কারণ দেখছেন না বলেই তার ঘনিষ্ঠদেরকে জানিয়েছেন। এমনকি তার ভাই শামীম ইস্কান্দারকেও তিনি বলেছেন যে বিএনপি কেন নির্বাচনে যাবে না?
বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে যে তিনি দলকে নির্বাচনমুখী করতে চান এবং আন্দোলনের অংশ হিসেবেই তিনি দলকে নির্বাচনে নিয়ে যেতে চান। শামীম ইস্কান্দারের ঘনিষ্ঠ একজন বলেছেন, আন্দোলনের কৌশল নিয়ে তারেক জিয়ার সঙ্গে খালেদা জিয়ার বড় ধরনের মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া মনে করেন এবারের নির্বাচন অন্যরকম হবে। এই নির্বাচনে সরকার চাইলেই কারচুপি কিংবা অন্যকিছু করতে পারবে না। কারণ আন্তর্জাতিক মহল তাদের নজরদারিতে রাখবে এবং নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় থাকবেন। একাধিক সূত্র বলছে এই কারণেই বিএনপির নির্বাচন করা উচিত বলে বেগম খালেদা জিয়া মনে করছেন। পাশাপাশি শামীম ইস্কান্দার ও তার ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন বেগম জিয়ার এটাও শঙ্কা যে এবারের নির্বাচন থেকে যদি বিএনপি দূরে থাকে তবে বিএনপি নিঃশেষ হয়ে যাবে। কারণ আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচন প্রতিহত করা কিংবা সরকার পতন করানো বিএনপির পক্ষে সম্ভব নয় এমনটাই মনে করেন খালেদা জিয়া।
বেগম খালেদা জিয়া ঈদের দিন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সাথে বৈঠকেও বলেছেন যে ‘আমার মুক্তির জন্যই আপনারা কিছু করতে পারেননি, আর আন্দোলন করে সরকার ফেলে দিবেন কীভাবে?’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য এই বক্তব্যের সত্যতা স্বীকার করেছেন। বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির আন্দোলন নিয়ে তিরস্কার করেছেন বলেও বিএনপীর স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য স্বীকার করেছেন। এরকম পরিস্থতিতে আন্দোলনের পথে না গিয়ে দল গুছিয়ে নির্বাচন অভিমুখী করা এবং নির্বাচনে ভালো ফলাফল করার চেষ্টা করাটাই বেগম জিয়ার রাজনৈতিক কৌশল। অন্যদিকে বেগম জিয়ার পুত্র লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া মনে করছেন, এবার বিশ্ব পরিস্থিতি ভিন্ন। বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তবে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবেনা। শেষ পর্যন্ত সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে বাধ্য হবে এবং সরকারের পতন ঘটবে।
তবে রাজনীতি এত সহজ-সরল অঙ্কের হিসেব নয় বলেই বেগম জিয়া মনে করেন। অন্তত বিএনপির নেতাদের সাথে সর্বশেষ বৈঠকে তিনি সেরকম ধারণা দিয়েছেন। তবে বিএনপির নেতারা মনে করছেন বেগম জিয়ার এই নির্বাচনমুখী হওয়ার পেছনে অন্য কোনো রহস্য আছে। সরকারের সঙ্গে তার একটা গোপন সমঝোতা হয়েছে যে বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যায় তাহলে নির্বাচনের পরপরই বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানো হবে। এখন দেখা যাক বেগম খালেদা জিয়া সক্রিয় হবার পর তার রাজনৈতিক সক্রিয়তায় কে লাভবান হয়।
২০ দিন আগে শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫