ক্ষমতাসীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জনতার আদালতে প্রত্যেকটি অপকর্মের জবাব দিতে হবে। আজ মঙ্গলবার এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষে এ মন্তব্য করেন তিনি।
এবারের নির্বাচনকে ভাগাভাগির নির্বাচন মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, ‘‘দু-একদিনের মধ্যে তাদের
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘এখানে জনসাধারনের ইচ্ছা কোনো ফ্যাক্টর নয়,এখানে ফ্যাক্টর শেখ হাসিনার ইচ্ছা। তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে চান- এটাই বড় কথা। এর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন ওবায়দুল কাদের সাহেব ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার গং।’
তিনি বলেন, ‘আজকে দেশ-জাতি ও আন্তর্জাতিক মহলের মতামতকে উপেক্ষা করে প্রহসনের নির্বাচন করার যে জেদ অব্যাহত রাখছে বর্তমান শাসকগোষ্ঠি, জনরোষ এবং আন্তর্জাতিক মহল সব দিক থেকে আজকে এই সরকারের বিষয়ে যে ওয়াকিবহাল এবং মানুষের জনরোষ যে কত তীব্রতর হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে কত বিরূপ এই পাতানো নির্বাচনের জন্য। তারা মনে করছেন যে, আমরা সব কিছু মিলিয়েই বৈতরণী পার হয়ে যাব।’
রিজভী বলেন, ‘সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং দালালরা- কেউ কিন্তু ছাড় পাবেন না। জনগণের আদালত গঠিত হচ্ছে এবং এই আদালতে তাদের প্রত্যেকটি অপকর্মের জবাব দিতে হবে।’
গার্মেন্টসশিল্প ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘সরকার তার অবৈধ ক্ষমতাকে ধরে রাখতে গিয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যত কী হবে, বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে- এর কোনো খেয়াল তারা রাখতে চান না, রাখছেন না। আজকে গার্মেন্টসশিল্প ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে। শেখ হাসিনা নির্বিকার। এর ওপর যদি গার্মেন্টেসপণ্য রপ্তানির ওপরে স্যাংশন আসে, কত মানুষ যে বেকার হবে। এই ছোট্ট একটি ভূখণ্ডের ১৮০ মিলিয়ন মানুষ তাদের কর্মসংস্থান যদি না থাকে, গার্মেন্টসশিল্পের ওপর যদি আঘাত আসে তাহলে কী পরিণতি হবে শেখ হাসিনা সেটা ভাবছেন না।’
রিজভী বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের গার্মেন্টসশিল্পকে একটা ধবংসের দ্বার প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছেন। উনি দেশ চান না, উনি দেশের মানুষ ও দেশের অর্থনীতি মজবুত হোক তা চান না। সেই কারণে তামাশার নির্বাচন করার জন্য তিনি মরিয়া। আর এটা করতে গিয়ে এ দেশকে কি পরিমাণ খেসারত দিতে হচ্ছে এবং হবে তার কোনো ঠিকানা নেই।’
চার মাসে ২২ হাজারের বেশি নেতাকর্মী গ্রেপ্তার
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘গত ২৮ ও ২৯ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ২২ হাজার ৪৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই সময়ে ৯২৭টির বেশি মামলায় ৮২ হাজার ৪৩৮ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ সময়ে হামলায় একজন সাংবাদিকসহ ২০ জন নেতাকর্মী নিহত এবং ৮ হাজার ৬৮৯ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। একতরফা নির্বাচন নিশ্চিত করতে শীর্ষ নেতাদের বন্দি রাখা হয়েছে।’
গত ১৫ বছর যাবত সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নিরুদ্দেশ করে দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির এ নেতা। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক, সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপনকে (আজ মঙ্গলবার) রিমান্ডে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রিমান্ডের নামে বিরোধী নেতাকর্মীদের নির্যাতন শেখ হাসিনা তার শাসনামলে একটা নতুন অধ্যায় শুরু করেছে। এতেও যখন নেতাকর্মীরা ভয় না পান, তখন সরকার হতাশ হয়ে পড়ে।’
৩ বছর আগে মারা যাওয়া নেতাকেও সাজা
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘রাজধানীর রামপুরা, ধানমন্ডি, মুগদা ও সবুজবাগ থানার ৪টি মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় মৃত ব্যক্তিসহ মোট ৩২ জন নেতাকর্মীকে ফরমায়েশি রায়ে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত।
তিনি বলেন, ‘সবুজবাগ থানার ২০১২ সালে দায়েরকৃত একটি মিথ্যা মামলায় (মামলা নং-১০-১২-১২) বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের মোট ১৫ জন নেতাকর্মীকে ফরমায়েশি রায়ে ৩ বছর ৬ মাস কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে ৭৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা সোহরাওয়ার্দী চেয়ারম্যান গত ৩ বছর আগেই মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পরেও তার নামে মিথ্যা মামলায় সাজা প্রদান করা হয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘রামপুরা থানার একটি মিথ্যা মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের মোট ১৪ জন নেতাকর্মীকে ৩ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এই ধরনের বানোয়াট মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি সাজার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও সাজা বাতিলের জোর আহবান জানাচ্ছি।’
৫ দিন আগে শনিবার, জুন ৭, ২০২৫