বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন যে, দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা ও প্রবল বর্ষণে জলাবদ্ধতা কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগ নিরসনে সরকারের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।
রোববার রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ তুলে ধরেন।
রিজভী বলেন, "শেরপুর, নেত্রকোণা, বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং উত্তরাঞ্চলে বন্যা
ও প্রবল বর্ষণের ফলে কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু সরকার তেমন কিছুই করছে না। পূর্বাঞ্চলে বন্যায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যাপক তৎপরতা দেখা গিয়েছিল, কিন্তু বর্তমানে তা অনুপস্থিত। কৃষক ও খামারিদের দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারকে বন্যাকবলিত মানুষের দুরাবস্থা সম্পর্কে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। চাল, ডাল, সবজি, মাছ, মাংস, ডিমের বাজার সরবরাহ ঠিক রাখতে সরকারের উদ্যোগ প্রয়োজন। সার, কীটনাশক ও বীজের সরবরাহ বাড়িয়ে কৃষক ও খামারিদের পাশে দাঁড়াতে হবে।"তিনি আরও বলেন, "জীবনযাত্রার মান স্বাভাবিক রাখতে ক্ষতিগ্রস্ত আবাসন পুনর্নির্মাণ, পয়ঃনিস্কাশন, বিদ্যুৎ ও পুষ্টির মতো প্রয়োজনীয় সেবাগুলোর ঘাটতি যাতে না হয়, সেই বিষয়টি বিবেচনা করে উদ্যোগ নিতে হবে। শিশুদের অপুষ্টিতে ভোগার হাত থেকে রক্ষা করতে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। বন্যা পরবর্তী অসুস্থতা ও পানিবাহিত রোগ নিরাময়ের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহে সরকারকে তৎপর হতে হবে।"
রিজভী জানান, ভয়াবহ বন্যায় শেরপুর ও নেত্রকোণায় রোপা আমন ও সবজি চাষিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোণা জেলার পাঁচ উপজেলায় ২০,৯০৯ হেক্টর জমির রোপা আমন ক্ষেত সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে, যার ফলে ৭০ হাজারের বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। সবজি চাষের জন্য ১৬০ হেক্টর জমির ক্ষতি হয়েছে, যার ফলে ৫,৩২০ কৃষকের ক্ষতি ১৩ কোটি টাকা। প্রায় ১,৭৩০টি পুকুর ও মৎস্য খামার ডুবে গেছে, ক্ষতির পরিমাণ ৮ কোটি টাকা। শেরপুরে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই বছর ৯৫,৭৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছিল, যার মধ্যে ৩৭,১৫৫ হেক্টর জমির ফসল বন্যায় নষ্ট হয়েছে।
এ সময় বিএনপির পক্ষ থেকে কিছু দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো— বন্যার পানিতে যাদের জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে, তাদের সঠিক তালিকা তৈরি করে আগামী ফসল না ওঠা পর্যন্ত সর্বাত্মক ত্রাণ সহায়তা প্রদান, আগামী ফসলের জন্য সুদমুক্ত কৃষি ঋণ প্রদান, বিনামূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক ও সেচের তেলের ব্যবস্থা করা, আগামী ফসলের আগে রবি শস্য উৎপাদনের জন্য বীজ প্রদান করা।
এছাড়া, যাদের মৎস্য, হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশুর খামার বন্যায় ধ্বংস হয়েছে, তাদের তালিকা তৈরি করে পুনরায় খামার প্রতিষ্ঠার জন্য সুদমুক্ত ঋণসহ অন্যান্য সহায়তা প্রদান করা, যাদের বাড়ি-ঘর আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ ধ্বংস হয়েছে, তাদের পুনর্নির্মাণে সহায়তা করা, নদীর বাঁধ ভেঙে যে সকল গ্রাম-বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে, সেখানে বসবাসকারীদের সরকারি খাস জমিতে বা আশ্রয়ন প্রকল্পে স্থানান্তরিত করা, এবং অন্যান্য ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ ধ্বংস হয়েছে, সেগুলো সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করা।
রিজভী আরও বলেন, বন্যার পানিতে যাদের শিক্ষা সামগ্রী বিনষ্ট হয়েছে, তাদের সরকারি উদ্যোগে শিক্ষা সামগ্রী ও সহায়তা প্রদান করতে হবে। বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে রোগ-বালাইগ্রস্ত মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং প্রয়োজন হলে এলাকায় মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করে চিকিৎসা দিতে হবে।
১ দিন আগে শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫