Daily Bangladesh Mirror

ঢাকা, শুক্রবার, জুন ৬, ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সারাদেশ

আঙুল ফুলে কলাগাছ বিআরটিসির কর্মকর্তা ইমাম হোসাইন

ডেস্ক রিপোর্ট:
৫ দিন আগে শুক্রবার, জুন ৬, ২০২৫
# ফাইল ফটো




রাষ্ট্রের একমাত্র পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি’র একজন নবম গ্রেডের কর্মকর্তা ইমাম হোসাইন। ২০২৩ সালে তৎকালীন চেয়ারম্যানের আত্মীয় সুবাদে “ক্রয় কর্মকর্তা” হিসেবে তিনি নিয়োগ পেয়েছিলেন। “ক্রয় কর্মকর্তা” হিসেবে নিয়োগ পেলেও ইমাম নিজেকে পরিচয় দেন “ম্যানেজার (ক্রয়)” হিসেবে, যা কিনা ৬ষ্ঠ গ্রেডের একটা পদ। বিআরটিসি’র ওয়েবসাইটে প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের যে তালিকা দেওয়া

আছে- সেখানেও তার পদবি “ম্যানেজার(ক্রয়)”। এই পদবি ব্যবহার করে প্রধান কার্যালয়ের ক্রয় বিভাগ থেকে পত্রিকায় নিয়মিত টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেন তিনি। কিন্তু বিআরটিসি’র প্রশাসন বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে জানা যায়, “ম্যানেজার (ক্রয়)” নামে সংস্থাটি তে বর্তমানে কোনো পদ নেই- অনেক আগেই গোল্ডেন হ্যান্ডশেক এ পদটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। ফলে এই পদ কারও ব্যবহার বা পদটিতে পদায়নেরও সুযোগ নেই।


কিন্তু তাতে কি! ঐ যে বললাম বিআরটিসিতে ইমাম ই যেন সর্বেসর্বা! শুধু কি ম্যানেজার (ক্রয়)! নাহ! পূর্বের ধারাবাহিকতায় তিনি একাধারে চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এর পিএস, ম্যানেজার (বিআরটিসি)- যা পূর্ব পদ সচিব (বিআরটিসি) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। সেইসাথে কর্পোরেশনের প্রশিক্ষণ বিভাগে চলমান সেইপ প্রকল্পেরও একটা পদে দায়িত্ব পালন করছেন ইমাম- শুধু এই একটা পদে থাকার কারণেই তিনি অতিরিক্ত ১৩ হাজার টাকা বেতন/ভাতা পান।


সরকারি চাকরি করে কেউ মিতব্যয়ী হয়ে সংসার চালাচ্ছে, আর কেউ হয়েছে আঙুল ফুলে কলাগাছ। বিআরটিসি’র ইমাম দ্বিতীয় দলেরই একজন। ২০২৩ সালে সংস্থাটিতে নিয়োগ পাওয়ার পর খুব স্বল্প সময়েই “পরিবহন ভবন” এর হর্তাকর্তা হয়ে উঠেন তিনি। অভিযোগ আছে, গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর একটি “বিশেষ রাজনৈতিক দলের” কর্মী পরিচয়ে অনৈতিকভাবে একের পর এক প্রাধিকার বহির্ভূত সুবিধা ভাগিয়ে নিচ্ছেন তিনি। নবম গ্রেডের এই কর্মকর্তা অফিস করেন ৫ম গ্রেডের ‘ডিজিএম ক্রয়’ এর রুমে।


বিআরটিসি’র “পরিবহন পোল” এ খোজ নিয়ে জানা যায়, প্রাধিকার না থাকলে একটা ব্যক্তিগত গাড়ি (নম্বর: গ ১৩-৩২৩০) ব্যবহার করেন ইমাম। অথচ তার আগে প্রতিষ্ঠানটির একজন জিএম এই গাড়ি ব্যবহার করতো। ফলে, রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটিতে তিনি কতোটা প্রভাবশালী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সকল অনিয়ম ই যেন ইমামের ক্ষেত্রে নিয়ম হয়ে যায়। অনৈতিক যে কোনো সুবিধা আদায়ে তিনি পদ অনুয়াযী প্রাধিকার বা সরকারি চাকরি বিধির থোরাই কেয়ার করেন।


অনিয়মের ফিরিস্তি এখানেই শেষ নয়! অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য তিনি ‘ম্যানেজার বিআরটিসি’ নামে ৬ষ্ঠ গ্রেডের আরেকটি পদ ব্যবহার করেন। কি লাভে! পূর্বে এই পদটি “সচিব বিআরটিসি” নামে পরিচিত ছিল। মানে প্রতিষ্ঠানটির সচিবালয় শাখার প্রধান তিনি। যার অধীনে চেয়ারম্যান দপ্তর, জনসংযোগ শাখা, নেজারত শাখা, পরিবহন পোল, ডেসপাসসহ আরো শাখা রয়েছে। খোজ নিয়ে জানা যায়, একাধিক পদ ব্যবহার করে পছন্দের ঠিকাদারকে কর্পোরেশনের টেন্ডার পাইয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে চালক, কন্ডাক্টরদের বদলি বানিজ্য করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠানটি থেকে লাখ লাখ টাকা ভাগিয়েছেন তিনি।


তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় খোজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে গ্রামে তিনতলা বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন তিনি। আর সবই হয়েছে বিআরটিসি তে ২ বছর চাকরির সুবাধে। মধ্যবিত্ত পরিবারের বেড়ে উঠেও কিভাবে এতো অল্প সময়ে গ্রামে বহুতল ভবনের কাজ শুরু করা যায় এসব নিয়ে এলাকাবাসীরও বিস্ময়ের শেষ নেই! নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশি বলেন, বিআরটিসি তে যোগদান করে ইমাম “আলাদীনের চেরাগ” হাতে পেয়েছে। সামাজিক যে কোন অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে খেলাধুলায় তাকে ফোনে জানালেই ৫-১০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেয়।


বিআরটিসি’র একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ৫ তারিখের আগের ইমাম আর এর পরের ঈমাম যেন সম্পূর্ণই ভিন্ন। এতোদিন তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ের কথা শুনিনি। তবে ৫ তারিখের পর শুনতেছি ঢাকা মহানগর শিবিরের সভাপতি নাকি তার বন্ধু। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সময় নাকি সে শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলো।


অথচ সরকারি চাকরি বিধি, প্রতিষ্ঠানটির প্রবিধানমালা অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের চাকরি করে রাজনীতি করার সুযোগ নেই।

৫ দিন আগে শুক্রবার, জুন ৬, ২০২৫

ইউটিউব সাবস্ক্রাইব করুন